![Screenshot 2025-02-12 165839](https://dailyprovatalo.com/wp-content/uploads/2025/02/Screenshot-2025-02-12-165839-696x466.png)
বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতার মুখেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল সাবেক সরকার। আর সে লক্ষ্য পূরণে বিক্ষোভ দমন করার কৌশল নিয়েছিল তারা। এর অংশ হিসেবে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার-আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এমন অভিমত দিয়েছেন।
আজ বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে টুর্কের এমন বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ছিল। ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংস পথ ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল।
এ প্রসঙ্গে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘জনবিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে একটি পরিকল্পিত এবং সুসমন্বিত কৌশল হিসেবে এমন নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল সাবেক সরকার। বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাঁদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।’
টুর্ক আরও বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং নিশানা করে হত্যার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। যা সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে পড়ে এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল বলেও বিবেচিত হতে পারে।’
জাতীয় ক্ষত সারাতে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাকে অপরিহার্য বলে মনে করেন ফলকার টুর্ক।
প্রাণহানির ঘটনাগুলো নিয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়। ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন মানবাধিকারবিষয়ক তদন্তকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার তদন্তকাজে ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। যেখানে যেখানে প্রবেশাধিকার চাওয়া হয়েছে, সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে এবং যথেষ্ট নথিপত্র সরবরাহ করেছে।
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত মৃত্যুর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন।
যখন সাবেক সরকার দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছিল, তখন সংঘটিত প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থক, পুলিশ, গণমাধ্যম কর্মীদের লক্ষ্য করে অন্যান্য গুরুতর প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেগুলোও এ প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। হিন্দু, আহমদিয়া মুসলিম এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর আদিবাসী জনগণও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। যদিও বিভিন্ন ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ১০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে অনেক প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং এসব গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের পরও অপরাধীরা এখনো দায়মুক্তি উপভোগ করছে—এমন কথা উঠে আসে প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, তাদের ৪৪ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।