ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি পাওয়ারের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। এর পুরোটা বাংলাদেশে সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ আদানি পাওয়ারকে ভারতে তার ১৬শ’ মেগাওয়াট প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে পুনরায় শুরু করতে বলেছে। শীতের সময়ে কম চাহিদা এবং অর্থপ্রদান নিয়ে বিরোধের কারণে সরবরাহের পাশাপাশি বিক্রিও কমে যাওয়ার তিন মাসেরও বেশি সময় পরে বাংলাদেশ এ কথা জানাল।
২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল আদানি। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত সংস্থাটি তাদের ২ বিলিয়ন ডলারের প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিটের প্ল্যান্টটির প্রতিটি থেকেই একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করে তারা।
রয়টার্স বলছে, অর্থপ্রদানে বিলম্বের কারণে ভারতীয় এই কোম্পানিটি গত বছরের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশে সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এর ফলে গত ১ নভেম্বর তাদের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে প্ল্যান্টটি প্রায় ৪২ শতাংশ সক্ষমতায় কাজ করছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রয়টার্সকে জানায়, তারা আদানির কোম্পানিকে মাসে ৮৫ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার করে পরিশোধ করছে। এখন চাহিদা বাড়ায় দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে বলেছে।
বিপিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্সকে বলেন, আমাদের প্রয়োজন অনুসারে, তারা দ্বিতীয় ইউনিটটি সিঙ্ক্রোনাইজ করার পরিকল্পনা করেছে, কিন্তু উচ্চ কম্পনের কারণে তা হয়নি। কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সোমবার থেকে ইউনিটটি পুনরায় চালু করা যায়নি।
রেজাউল করিম আরও বলেন, বর্তমানে আমরা মাসে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিচ্ছি। আমরা আরও বেশি অর্থ পরিশোধের চেষ্টা করছি এবং আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বকেয়া কমিয়ে আনা। ফলে এখন আদানির সঙ্গে কোনো বড় সমস্যা নেই।
আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের আহ্বানে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি। যদিও গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র জানিয়েছিল, বিপিডিবির কাছে তাদের প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি ডলার বাকি আছে। ওই সময় বিপিডিবি চেয়ারম্যান বলেছিলেন, এই বকেয়ার পরিমাণ ৬৫ কোটি ডলার।
বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে আদানির সঙ্গে বিরোধ আছে বাংলাদেশের। রয়টার্সের হিসাবে, অন্যান্য ভারতীয় বিদ্যুতের চেয়ে প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি অর্থে বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এদিকে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি আদালত। ওই কমিটির প্রতিবেদন এ মাসে সামনে আসতে পারে। তখন আদানির সঙ্গে চুক্তিটি নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হতে পারে বলে জানায় রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছরের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যান হাসিনা। এরপর গত সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার সময়ে স্বাক্ষরিত প্রধান জ্বালানি চুক্তিগুলো পরীক্ষা করার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্যানেল নিয়োগ করে অন্তর্বর্তী সরকার।