গাজায় জাতিগত নিধন এড়িয়ে চলতে বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব

0
8
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তো
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গাজায় জাতিগত নিধন এড়িয়ে যেতে বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে উপত্যকাটি যুক্তরাষ্ট্র দখল করে নেবে বলে ট্রাম্প মঙ্গলবার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে এ আহ্বান জানালেন তিনি।
 
ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের পর গতকাল বুধবার জাতিসংঘের একটি বৈঠকে গুতেরেস বলেন, ‘সমাধান খুঁজতে গিয়ে আমাদের সমস্যা আরও খারাপ করে ফেলা যাবে না। আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তির ওপর বিশ্বাস রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ধরনের জাতিগত নিধনই এড়িয়ে যাওয়া জরুরি। আমাদের অবশ্যই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নীতি (ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকটে) সুনিশ্চিত করতে হবে।’
 
যদিও ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের অনুশীলন–সংক্রান্ত কমিটিতে গতকাল দেওয়া এক ভাষণে গুতেরেস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা গাজার ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন–সংক্রান্ত তাঁর প্রস্তাব নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
 
গুতেরেস গতকাল জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গেও গাজা এবং এ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
 
বাদশাহ আবদুল্লাহ আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে যাবেন। তখন তিনি আরব দেশগুলোর হয়ে একটি যৌথ বার্তা ট্রাম্পের কাছে পৌঁছাবেন বলে কমিটিকে বলেছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) দূত রিয়াদ মনসুর।
 
রিয়াদ মনসুর বলেন, ‘ফিলিস্তিন ছাড়া আমাদের কোনো দেশ নেই। গাজা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মূল্যবান অংশ। আমরা গাজা ছেড়ে যাচ্ছি না। পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নেই, যে বা যারা গাজাসহ আমাদের পূর্বপুরুষের ভূমি থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে উচ্ছেদ করতে পারে।’
 
মনসুর আরও বলেন, ‘আমরা গাজাকে পুনর্নির্মাণ করতে চাই। আমরা এটিকে আবার সংগঠিত করতে চাই। এ প্রচেষ্টায় আমরা বিশ্বের সব দেশের কাছে আমাদের সাহায্য করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
 
জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের নিরাপদ এবং স্বীকৃত সীমান্তের ভেতর পাশাপাশি বসবাস করার উপযোগী দুটি রাষ্ট্রের পরিকল্পনাকে সমর্থন করে আসছে।
 
ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা নিয়ে নিজেদের একটি আলাদা রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন।
 
১৯৬৭ সালে আরব দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ওই তিনটি এলাকার সব দখল করেছিল। পরে ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেয়।
 
গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো টেকসই শান্তির জন্য দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে বাস্তব, অপরিবর্তনীয় ও টেকসই অগ্রগতি প্রয়োজন। প্রয়োজন দখলদারির অবসান। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গাজা হবে এর অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
 
মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফেরানোর পরামর্শ দিতে গিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার একমাত্র টেকসই সমাধান হলো, ইসরায়েলের পাশাপাশি শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাসকারী একটি কার্যকর, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র।’
 
২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা এবং বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেওয়ার দুই বছর পর ভূখণ্ডটিতে সরকার গঠন করে হামাস। যদিও গাজায় প্রবেশ এবং বের হওয়ার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ইসরায়েল ও মিসরের হাতে। গাজার দক্ষিণের একটি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে মিসর। বাকি সব সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল।
 
রয়টার্স
 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.