দক্ষিণ আফ্রিকা জমি বাজেয়াপ্ত করছে এবং নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে রোববার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘এই পরিস্থিতি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ভবিষ্যৎ সব তহবিল বন্ধ রাখব।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমির বণ্টন নিয়ে বিভেদ দীর্ঘদিনের। সেখানে শ্বেতাঙ্গ শাসনামলে হওয়া বৈষম্য দূর করার যে প্রচেষ্টা, রক্ষণশীল ডানপন্থীরা তার তীব্র সমালোচনা করেন।
ওই সমালোচনাকারীদের দলের একজন ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ এই ধনীর জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। মাস্ক এখন ট্রাম্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের একজন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গত মাসে একটি বিলে সই করেন। ওই বিলে বলা আছে, জনস্বার্থে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার চাইলে শূন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবে।
ওই বিলের পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার যুক্তি, বিলটি সরকারকে ইচ্ছেমতো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দেয় না। বরং প্রথমে (সম্পত্তির) মালিকের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
তবে সরকার থেকে যতই ব্যাখ্যা দেওয়া হোক, কিছু কিছু মানুষের আশঙ্কা, স্বাধীনতার পর জিম্বাবুয়ে সরকার যেভাবে শ্বেতাঙ্গদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো অধিগ্রহণ করেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায়ও একই পরিস্থিতি হবে। ১৯৮০ সালে স্বাধীনতার পর জিম্বাবুয়ে সরকার শ্বেতাঙ্গ মালিকানাধীন অনেক কোম্পানি জব্দ করে এবং বেশির ভাগেরই কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে।
ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দেওয়ার পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা ভয়ংকর কিছু করছেন, ভয়ানক কিছু। এখন সেসব নিয়ে তদন্ত হবে। আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসব। এবং দক্ষিণ আফ্রিকা কী করছে, আমরা সেটা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত…তারা জমি কেড়ে নিচ্ছে এবং জমি বাজেয়াপ্ত করছে এবং তারা আসলে যা করছে, সেটা হয়তো এর থেকেও খারাপ কিছু।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির মালিকানা একটি বিতর্কিত বিষয়। বর্ণবাদের অবসান হওয়ার তিন দশক পরও দেশটিতে এখনো বেশির ভাগ কৃষিজমি শ্বেতাঙ্গদের মালিকানায়।
বর্ণবাদ অবসানের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি আদালতগুলো ভূমি নিয়ে অল্প কয়েকটি বিরোধের নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয়েছে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর জমি পূর্বে বাস্তুচ্যুত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বলেছে, বর্ণবাদী শাসন আমলে ১৯১৩ সালের আদিবাসী ভূমি আইন (নেটিভস ল্যান্ড অ্যাক্ট ১৯১৩)–এর মাধ্যমে হাজার হাজার কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারকে জোর করে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।
ভূমির মালিকানা নিয়ে এই বিরোধ দক্ষিণ আফ্রিকায় বেশ সংবেদনশীল একটি বিষয়। এ নিয়ে অধিকারের প্রশ্নে দেশটির ডানপন্থীরা এক বিন্দুতে জড়ো হয়েছেন। মাস্ক এবং ডানপন্থী সাংবাদিক কেটি হপকিন্স শ্বেতাঙ্গ ভূমিমালিকদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়, ১৯৭১ সালের ২৮ জুন। তাঁর বাবা একজন প্রকৌশলী ছিলেন, মা কানাডায় জন্ম নেওয়া একজন মডেল। মাস্কের কিশোর বয়সে তাঁর পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়ে।
এএফপি, নিউইয়র্ক