কুম্ভমেলায় মৃত্যু: প্রকৃত তথ্য গোপনের অভিযোগে উত্তাল ভারতের সংসদ

0
9
ভারতের উত্তর প্রদেশে মহাকুম্ভ মেলায় পিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর উদ্ধারকাজ করছে পুলিশ, এএফপি ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরুর দিন বলেছিলেন, অনেক বছর পর এই প্রথম সংসদীয় অধিবেশনের আগে বিদেশি স্ফুলিঙ্গ দেখা গেল না। এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, সংসদ সরগরম করে তুলতে এবার বিদেশি প্ররোচনায় বিরোধীদের উজ্জীবিত হতে দেখা যাচ্ছে না। ‘বিদেশি প্ররোচনার’ অভিযোগ না থাকলেও আজ সোমবার ভারতের সংসদের উভয় কক্ষ গমগম করে ওঠে কুম্ভমেলায় হাজার হাজার মানুষের পদপিষ্ট হওয়া ও সেই কারণে ‘অগুন্তি’ মানুষের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।

প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছিলেন, রাফাল দুর্নীতি, পেগাসাস কেলেংকারি, হিন্ডেনবার্গ তথ্যে আদানি গোষ্ঠীর দুর্নীতির মতো যা কিছু অভিযোগ এত কাল ধরে হয়েছে, সবই এসেছে বিদেশ থেকে এবং তা জানাজানি হয়েছে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে। এবারই ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছিলেন, এবারের অধিবেশন সম্ভবত শান্তিতে হতে চলেছে। তাঁর সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো মহাকুম্ভে ঘটে যাওয়া মহাবিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে। আজ সংসদের দুই কক্ষেই বিরোধীরা মহাকুম্ভে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সরকারকে চেপে ধরেন। দাবি জানান, পদপিষ্ট হয়ে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, কতজনই–বা নিখোঁজ, তার প্রকৃত সংখ্যা জানাতে। সরকার আজও সেই তথ্য জানাতে পারেনি।

কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধীরা লোকসভা ও রাজ্যসভায় কুম্ভ বিপর্যয় নিয়ে সরকারকে জবাবদিহি করার জন্য চাপ দেন। আলোচনার দাবি জানান। বিরোধীদের অভিযোগ, ঘটনার পর পাঁচ দিন কেটে গেছে, আজ পর্যন্ত উত্তর প্রদেশ সরকার কতজনের মৃত্যু হয়েছে, কতজনই–বা নিখোঁজ, সেই তালিকা প্রকাশ করেনি। সরকারিভাবে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলা হলেও কারা মারা গেছেন, তাঁদের নামধাম কিছুই প্রকাশ করেনি। বিরোধীদের দাবি, শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সরকার হতাহতের সংখ্যা গোপন করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অসহায়। স্বজন হারানো মানুষের কাছে প্রশাসন কোনো তথ্যই দিতে পারছে না। বিরোধীরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের উচিত, ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা।

প্রকৃত তথ্য জানানোর দাবিতে বিরোধীরা একটা সময় সভাকক্ষের ওয়েলে পর্যন্ত নেমে আসেন। লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়াম্যান তাঁদের শান্ত থাকার অনুরোধ সত্ত্বেও কাজ হয়নি। সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও সদস্যদের অনুরোধ করেন সভার কাজ চালাতে সহযোগিতার জন্য। কিন্তু দুই কক্ষেই বিরোধীরা মোদি ও যোগীর ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানান। স্লোগান দেন। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা একটা সময় কংগ্রেস সদস্য প্রদ্যোৎ বরদলুইয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের সংসদে পাঠানো হয়েছে তাঁদের হয়ে প্রশ্ন করতে। টেবিল ভাঙতে নয়। অথচ সেটাই যদি করতে চান, তাহলে এত জোরে টেবিল চাপড়ান, যাতে তা ভেঙে যায়।’ কুম্ভ নিয়ে আলোচনায় সরকার রাজি না হওয়ায় দুই কক্ষেই বিরোধীরা ওয়াক আউট করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.