ইউএসএআইডিকে ‘অপরাধী সংস্থা’ আখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দিতে বললেন ইলন মাস্ক

0
10
এক্সের মালিক ইলন মাস্ক, ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডিকে ‘অপরাধী সংস্থা’ আখ্যা দিয়ে ইলন মাস্ক বলেছেন, এটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এমন সময় তিনি এ ঘোষণা দিলেন, যখন মাস্কের প্রতিনিধিদের সংরক্ষিত গোপন নথি দেখার সুযোগ না দেওয়ায় সংস্থাটির দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সংস্থাটি ‘বদ্ধ উন্মাদেরা’ চালাচ্ছেন। তিনি এ সংস্থার ভবিষ্যতের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।

বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা নিয়ে কাজ করা এই মার্কিন সংস্থার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি মাস্ককে নজিরবিহীন ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেছে। ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক মনে করেন, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে।

ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু উল্লেখ না করে বলেন, ‘ইউএসএআইডি “কিছু বদ্ধ উন্মাদ” মানুষের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা তাদের বের করে দিচ্ছি। এরপর আমরা সংস্থাটির বিষয়ে (ভবিষ্যৎ নিয়ে) সিদ্ধান্ত নেব।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) ও টেসলার মালিক বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়ে ওই বিভাগের ব্যয়সংকোচন–সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্যদের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকতে দেননি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। এ ঘটনার পর গতকাল রোববার ইউএসএআইডিকে ‘অপরাধী সংস্থা’ বলে আখ্যা দেন মাস্ক।

ইলন মাস্ক এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘এটি (ইউএসএআইডি) বন্ধ করে দেওয়ার সময় এসেছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নিরাপত্তাসংক্রান্ত ছাড়পত্র না থাকায় ডিওজিইর কর্মকর্তাদের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকতে দেননি ইউএসএআইডির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। এ কারণে ইউএসএআইডির নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক জন ভুরহিস এবং নির্বাহী ব্রায়ান ম্যাকগিলকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়, ফাইল ছবি: রয়টার্স

সরকারি ব্যয়, আমলাতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রণ কমানোর উদ্দেশ্যে ডিওজিই নামের এই বিভাগটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে গঠন করা হয়েছে। তবে এটি সরকারি কোনো বিভাগ নয়। ইউএসএআইডির নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিবাদের জড়ানোর পর একপর্যায়ে গোপন নথি সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করতে সক্ষম হন বিভাগের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সর্বপ্রথম সিএনএন প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক স্টিভেন চিউং ইউএসএআইডির সংরক্ষিত এলাকায় ডিওজিইর কর্মকর্তাদের প্রবেশের চেষ্টার ঘটনা অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে পিবিএসের একটি প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া খবর’ এবং ‘একেবারে সত্যও নয়’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম আন্তরিক ও আস্থাশীল নয়।’

তবে ডিওজিইতে কর্মরত কেটি মিলার টাস্কফোর্সের প্রবেশের চেষ্টার কথা নিশ্চিত করেছেন। যদিও তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘যথাযথ নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কোনো গোপন নথিতে প্রবেশ করা হয়নি।’

ট্রাম্প ইউএসএআইডিকে পুরোপুরি সংকুচিত করা বা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সেটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এই ঘটনা।

গত শনিবার ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটটি অফলাইনে চলে যায়। পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে সংস্থাটির জন্য পেজ খোলা হয়। এর ফলে সংস্থাটিকে পরবর্তী সময়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়ার জল্পনাকল্পনা আরও তীব্র হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস কুনস এক্সে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই সপ্তাহ ধরে ইউএসএআইডির কর্মীদের হয়রানি এবং ছাঁটাই করছেন। এখন তাঁর দল সংস্থাটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।’

ইউএসএআইডির কর্মীদের দিকে ইঙ্গিত করে ক্রিস বলেন, ‘এরা দেশপ্রেমিক আমেরিকান, যারা বিশ্বজুড়ে আমাদের নেতৃত্বের প্রচার করে। তারা আমাদের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ রাখে। ট্রাম্পের কাছে আমরা কম নিরাপদ।’

নির্বাচিত পদে না থাকা সত্ত্বেও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা সরকারের ওপর মাস্কের প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আল জাজিরা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.