পানামা খালের ওপর চীনের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ প্রভাব দূর করতে পানামা যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তবে ওয়াশিংটন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে গত শনিবার পানামা যান রুবিও। সেখানে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনোর সঙ্গে বৈঠক করেন।
পানামা সিটিতে রুবিওর সঙ্গে আলোচনার পর মুলিনো ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি চীন ও চীনা ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করবেন। অভিবাসী বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে তিনি আরও একবার মনে করিয়ে দেন, বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম জলপথের ওপর তাঁর দেশের পূর্ণ অধিকার কোনো আলোচনার বিষয় নয়।
রুবিওর পানামা সফর নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বলা হয়, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে রুবিও এ বার্তা দিয়েছেন যে চীনের উপস্থিতি পানামা খালের জন্য একটি হুমকি ও যুক্তরাষ্ট্র-পানামা চুক্তির লঙ্ঘন।
চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের একটি কোম্পানি পানামা খালের প্রবেশপথের কাছে দুটি বন্দর পরিচালনা করে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুচ বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন যে এ স্থিতাবস্থা অগ্রহণযোগ্য এবং এখনই এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে চুক্তির অধীন যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পানামাকে এখন ঠিক কী পদক্ষেপ নিতে হবে বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থাই–বা কী হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি রুবিও।
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। গত ২০ জানুয়ারি অভিষেক ভাষণেও তিনি খালটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানান।
গত শতাব্দীর শুরুর দিকে পানামা খাল নির্মাণ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে এ খালের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই ছিল। পরে একটি চুক্তির মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র পানামা সরকারের হাতে খালটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়।
ট্রাম্পের দাবি, চীন পানামা খাল পরিচালনা করছে। তিনি পানামার ওপর সামরিক শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে অস্বীকার করেছেন। লাতিন আমেরিকায় ওয়াশিংটনের বন্ধু ও শত্রু উভয় পক্ষ ট্রাম্পের এ ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করেছে।
গতকাল রোববার ট্রাম্প বলেছেন, সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন হবে বলে তিনি মনে করছেন না। তবে পানামা চুক্তির লঙ্ঘন করেছে ও যুক্তরাষ্ট্র খালটি ফিরিয়ে নেবে।
এদিন ট্রাম্প সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘চীন পানামা খাল পরিচালনা করছে। ওটা চীনকে দেওয়া হয়নি, ওটা পানামাকে দেওয়া হয়েছিল বোকামি করে; কিন্তু তারা চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং আমরা ওটা ফেরত নিতে চলেছি অথবা খুবই জোরালো কিছু হতে চলেছে। তবে আমার মনে হয় না পানামায় সেনাবাহিনীর দরকার হবে।’
এদিকে মুলিনো বলেছেন, রুবিওর সঙ্গে তাঁর বৈঠক সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। পানামায় কিছু চীনা ব্যবসা পুনর্মূল্যায়ন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, যার মধ্যে হংকংভিত্তিক কোম্পানি সি কে হাচিসন হোল্ডিংসকে ২৫ বছরের জন্য দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ছাড়ের বিষয়ও আছে।
সি কে হাচিসন হোল্ডিংস পানামা খালের দুই প্রান্তের প্রবেশপথের কাছে বন্দর পরিচালনা করে। ২০২১ সালে তাদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হয়।
ট্রাম্পের প্রশাসন ও আইনপ্রণেতারা ওই চুক্তিকে পানামা খালের ওপর চীনের প্রভাব বিস্তারের উদাহরণ হিসেবে টানছেন। তাঁদের অভিযোগ, এটা ১৯৭৭ সালে পানামা খাল পরিচালনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পানামার মধ্যে হওয়া নিরপেক্ষতা চুক্তির লঙ্ঘন।
পানামা সরকার ও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, ওই দুই বন্দর খালটি পরিচালনার অংশ না। পানামা ক্যানেল অথরিটি এ খাল পরিচালনা করে। এ অথরিটি পানামা সরকারের নজরদারির অধীনে থাকা একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা।
চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেছেন মুলিনো। তিনি বলেছেন, চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অধীন পানামায় চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি বিস্তৃত চুক্তি হয়েছিল। পানামার পূর্ববর্তী সরকারগুলোর আমলে হওয়া ওই চুক্তি নবায়ন করা হবে না। সময়ের আগেই চুক্তি বাতিলের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকের আগ্রহও প্রকাশ করেছেন পানামার প্রেসিডেন্ট মুলিনো।
রয়টার্স, পানামা সিটি