বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না: মির্জা ফখরুল

0
6
’৬৯–এর গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আসাদের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা। ২৩ জানুয়ারি
বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমি এ কথা গতকালও বলেছি। অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে নির্বাচনের সময়ে। আমি যে কথাটা বলছি, এর কারণ আছে। কারণ হচ্ছে, আমরা দেখছি যে বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছেন না।’
 
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ আসাদ পরিষদের উদ্যোগে ’৬৯–এর গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আসাদের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথাগুলো বলেন।
 
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, আমি প্রত্যাশা করব, আমি আশা করি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই নিরপেক্ষতা পালন করবেন এবং দেশে যে সংকট আছে, সেই সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করবার জন্য তাঁরা কাজ করবেন।’
 
তবে অন্তর্বর্তী সরকার কোন কোন বিষয়ে নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছেন না, তা খোলাসা করেননি মির্জা ফখরুল। গতকাল বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আজ বিষয়টি নিয়ে আবার বক্তব্য দেন।
 
‘দ্রুত নির্বাচন, নইলে অন্যান্য শক্তি মাথাচাড়া দেবে’
 
কেন তাঁরা দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চাইছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা আমি বলি, যে কথা বললে পরে আমার সমালোচনাও হয়। আমি বলি নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। এই কথাটা আমি বারবার বলার চেষ্টা করেছি যে নির্বাচন থেকে আমরা ১৫ বছর বঞ্চিত। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার একটা সুযোগ পাবে। আপনারা দেখছেন, জোর করে সেই বিষয়টাকে যদি বিতর্কিত করে ফেলা হয়, তাহলে তো জনগণ আবার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।’
 
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, নির্বাচন যদি দ্রুত না হয়, সময় ক্ষেপণ করা হয়, তাহলে অন্যান্য শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। তখন জনগণের যে চাহিদা, সেই চাহিদা থেকে তারা পুরোপুরিভাবেই বঞ্চিত হয়।’
 
এ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা এ কথাটা বারবার বলতে চাই, নির্বাচনে কে আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা লড়াই করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। বর্তমান যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে, সেই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। স্বাভাবিকভাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরেই জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত সমাজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই অবস্থায় আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না যে দেশের মানুষের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।’
 
‘নির্বাচনের জন্য চার-পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করব?’
 
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন রকম কর্মসূচি আছে। সেই কর্মসূচি নিয়ে তারা এগোতে চায়। তবে একটা বিষয়ে সবাই একমত, একটা নির্বাচন হওয়া দরকার। নির্বাচনটা শুধু একটা দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, নির্বাচনটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য একটা পথ সৃষ্টি করা, একটা দরজা খোলা। তিনি বলেন, ‘আজকে প্রশ্ন উঠছে যে সবগুলো সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া। তাহলে কি আমরা চার-পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করব? বা যত দিন সংস্কার সম্পন্ন না হয়, তত দিন ধরে অপেক্ষা করবে জনগণ?’
 
ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো দেখছি, আমাদের আমলাতন্ত্রে আগের যে ব্যবস্থা ছিল, সেই ব্যবস্থায় তারা এখনো সচিবালয় থেকে শুরু করে সমস্ত প্রশাসনে একইভাবে ভূমিকা পালন করছে, কোনো রদবদল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজগুলোতে সেই ধরনের লেখাপড়া হয় না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে, এটা অতীত থেকেই এসেছে এবং সেই পরিবর্তন এত অল্প সময়ে সম্ভবও নয়, কিন্তু আমরা সেই পরিবর্তনগুলো চাই।’
 
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সেই কারণে আমরা বলেছি যে নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচন দ্রুত হলে যে দল ক্ষমতায় আসবে জনগণের প্রতি তার যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকবে, সেই প্রতিশ্রুতি পালন করার জন্য অবশ্যই তারা দায়বদ্ধ থাকবে।’
 
‘ন্যূনতম বিষয়ে ঐকমত্য জরুরি’
 
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যারা একসঙ্গে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করছিলাম, আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। এখন যদি কোনো পরিবর্তন করতে হয়, পরিবর্ধন করতে হয় সেটাও সামনে আসতে পারে। ওটাকে সামনে রেখেই আমাদের এগোতে হবে। আমি মনে করি, আমাদের এই ন্যূনতম যে সংস্কার হচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক, সেই সংস্কার শেষ করে আমাদের অতি দ্রুত নির্বাচনের পথে যাওয়া উচিত। এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার বেরিয়ে আসবে তাদের দায়িত্ব হবে সংস্কারের যে কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) আছে, সেই কমিটমেন্টগুলো বাস্তবায়িত করা।’
 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আসাদের রক্তকে, আবু সাঈদের রক্তকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। সে জন্য আমাদের ঐক্য গড়ে তুলে তাদের (শহীদদের) স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে, এই হোক আজকের প্রতিজ্ঞা।’
 
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর সভাপতিত্বে ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যসচিব হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমান, আরেক অংশের সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, শহীদ আসাদের ছোট ভাই আজিজুল্লাহ এম নুরুজ্জামান প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.