ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে জিম্মিমুক্তি বিষয়ে শেষ মুহূর্তের জটিলতা কাটিয়ে ওঠা এবং এ নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আজ শুক্রবার এ কথা জানান তিনি।
নেতানিয়াহুর আজকের এ বক্তব্যের আগে তাঁর দপ্তর বলেছিল, গাজায় ১৫ মাসের যুদ্ধের ইতি টানতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়টি শেষ মুহূর্তের জটিলতায় আটকে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, জটিলতার অবসান ঘটায় আজই তিনি তাঁর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকছেন। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ওই যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন দেবে সরকার।
আজ ভোর হওয়ার আগেই এক বিবৃতিতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চুক্তি নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছার কথা জানান। তাঁর এ বক্তব্যে ইসরায়েলের তরফে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটির অনুমোদন পাওয়ার বিষয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা দৃশ্যত কেটে গেল।
আজ ভোরের আগেই এক বিবৃতিতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এসব তথ্য জানান। তাঁর এ বক্তব্যে ইসরায়েলের তরফে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটির অনুমোদন পাওয়ার বিষয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা দৃশ্যত কেটে গেল।
প্রথম দফায় ৪২ দিন মেয়াদি এ চুক্তির অধীন গাজায় যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে থাকা জিম্মিরা মুক্তি পেয়ে ইসরায়েলে ফিরবেন। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন ফিলিস্তিনি বন্দীরা। এ ছাড়া এ চুক্তির ফলে গত ১৫ মাসের ইসরায়েলি আগ্রাসন ও নজিরবিহীন তাণ্ডবে বাস্তুচ্যুত হওয়া লাখ লাখ ফিলিস্তিনি তাঁদের গুঁড়িয়ে যাওয়া বাড়িঘরে পাবেন ফেরার সুযোগ।
আগামী রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে বলে মধ্যস্থতাকারীদের অন্যতম কাতার জানিয়েছে।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হচ্ছে আজ। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন দেবে সরকার।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী
এদিকে চুক্তিটি চূড়ান্ত করার তোড়জোড় চলার মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় দফায় দফায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা থেকে ফিরতে চলা জিম্মিদের গ্রহণ করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্সকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় জিম্মিদের পরিবারগুলোকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, হামাস সব শর্তে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করবে না তাঁর মন্ত্রিসভা। ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাস শেষ মুহূর্তে চুক্তিতে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করতে চাইছে।
চুক্তিটি চূড়ান্ত করার তোড়জোড় চলার মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় দফায় দফায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন।
অবশ্য হামাস এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেতা ইজ্জাত আল-রিশক বলেন, তাঁরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গতকাল সকালে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় ওই ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা আগে নেতানিয়াহু জানান, ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
এর এক দিন আগে বুধবার সন্ধ্যায় কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আলাদাভাবে যুদ্ধবিরতির কথা নিশ্চিত করেন। দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও যুদ্ধবিরতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক পোস্ট করেছেন।
গতকাল মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েল ও হামাস—দুই পক্ষের প্রতিই কোনো বিলম্ব না করে চুক্তিটি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ চুক্তি সইয়ে মধ্যস্থতা করা দেশগুলোর একটি মিসর।
ইসরায়েলি হামলায় গত বুধবার নিহত হওয়া ফিলিস্তিনিদের একজন আহমেদ আরারাউয়ি (৩৭)। দাফনের আগে মরদেহ ঘিরে তাঁর চার শিশুসন্তানসহ অন্য স্বজনদের আহাজারি। জেনিন শরণার্থীশিবির, পশ্চিম তীর, ফিলিস্তিন, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ছবি: এপি
ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আনতে এবং ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলাদারির প্রতিবাদে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দেশটিতে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ জনের মতো নিহত হন বলে দাবি করে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাসের যোদ্ধারা।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ওই দিন থেকে গাজায় তাণ্ডব শুরু করেছে ইসরায়েল, যা এখনো চলছে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা অগণিত। এ ছাড়া হামলায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার ১৯ লাখই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা এ উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ।