ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলমের নামে ও তাঁর মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ২৩টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ব্যাংক হিসাবগুলোয় প্রায় ৬২৭ কোটি টাকা বিভিন্ন সময়ে জমা হয়েছে। উত্তোলন করা হয়েছে ৬২৫ কোটি টাকা। জমা ও উত্তোলন মিলিয়ে ব্যাংক হিসাবগুলোয় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।
দুদকের অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দুদক বলছে, জাহাঙ্গীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন ১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার। তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, জাহাঙ্গীর ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে তাঁরা প্রায় ২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুদক জানিয়েছে, জাহাঙ্গীরের প্রায় ১৯ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠান স্কাই রিঅ্যারেঞ্জ লিমিটেডের নামে নোয়াখালীতে খোলা একটি ব্যাংক হিসাবে চলতি বছরের ৮৩ দিনে ১৭৮ কোটি টাকা জমা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ওই হিসাব থেকে সমপরিমাণ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ওই ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময় মোট প্রায় ৫৫৪ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। নিজে জীবিকা নির্বাহের জন্য চিত্রনায়িকার গাড়ি চালিয়েছেন। জাতীয় সংসদে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেছেন। পরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
শেখ হাসিনা গত জুলাইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক…কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রথম আলো গত জুলাইয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিল জাহাঙ্গীর আলম, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তখন জাহাঙ্গীর মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার চৌদ্দগুষ্টির সম্পদ বিক্রি করলেও ৪০০ কোটি টাকা হবে না। আমার ট্যাক্স ফাইল (কর নথি) সরকারি দপ্তরে জমা দেওয়া আছে। এর বাইরে কোনো সম্পদ নেই।’
যদিও দুদক এখন জাহাঙ্গীরের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেল।
জাহাঙ্গীরের গ্রামের লোকজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, তিনি অর্থবিত্তের মালিক হতে শুরু করেন ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নিয়োগ-বাণিজ্য, বদলিসহ নানা তদবির করতেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীর নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে বেড়াচ্ছেন। তবে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।