সুখের সন্ধানে সৌদি পাড়ি, দুঃখ-কষ্ট নিত্যসঙ্গী

0
10
সৌদি আরব

সোনালী স্বপ্নে বিভোর হয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই পাড়ি দেন মরুরদেশ সৌদি আরবে। জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে দূর থেকেই দেশটিকে স্বপ্ন সারথি বানান অনেকে। দেশটির রাজধানী রিয়াদ শহরেই প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশির বসবাস। হারা নামক এলাকাটি তাদের সবার কাছেই পরিচিত। এখানেই ছোট-বড় ফ্ল্যাটে মেস করে থাকেন সবাই।

হারার ডিমান্ড গলি বাংলাদেশিদের কাছে আরও পরিচিত নাম। প্রতিদিন অন্তত একবার ডিমান্ড গলিতে উঁকি দেন প্রবাসীরা। কারণ- এখানেই কাজের নোটিশ দেন ঠিকাদার। মাঝে মাঝে টহল পুলিশের সাইরেন শুনলেই সটকে পড়েন সবাই।

রিয়াদ শহরের ‘বাথা’ বাঙালিদের বাণিজ্যিক শহর। মার্কেটের প্রায় প্রতি দোকানই চালান প্রবাসীরা। তবে পুলিশের ভয়ে তটস্থ থাকতে হয় সারাক্ষণ। কারণ- প্রবাসে থাকাদের বেশিরভাগেরই নেই আকামা অর্থাৎ কাজের অনুমতি।

এ বিষয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আকামা করতে পারছি না। সেজন্য সবসময় একটা আতঙ্ক কাজ করে।

প্রবাসীরা জানালেন, গালগল্প শুনে জমি ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে বিদেশে আসলেও, বাস্তবতা ভিন্ন। একে তো কম মজুরি, তার ওপর বাঙালি ঠিকাদার তা পরিশোধে সময় নেয় কয়েক মাস পর্যন্ত। ফলে আকামার খরচ মেটাতে না পেরে অবৈধ বনে যান প্রবাসীরা।

এক প্রবাসী বলেন, আকামা করতে খরচ পড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার সৌদি মুদ্রা। কিন্তু একজনের বেতন হয় সর্বোচ্চ আড়াই হাজার সৌদি রিয়াল। এই ঘাটতি কীভাবে পূরণ করবো আমরা।

আরেকজন বলেন, ঘুস দিয়ে অনেককে কাজে ঢুকতে হয়। টাকা নেয়ার পরও অনেকে কাজ পায় না। দালালরা টাকা খেয়ে ফেলে। বাংলাদেশ সরকার যদি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতো তাহলে একটা স্বস্তি আসতো।

জানা গেছে, ফ্রি ভিসার নামে দালালরা নিয়ে আসলেও কাজ না দিয়ে পালিয়ে যান। অভিজ্ঞতা না থাকায় নিজেরাও কিছু জুটাতে পারেন না। দিন শেষে তাদের ঠিকানা হয় মসজিদ নয়তো মার্কেটের বারান্দা।

বিষয়টি নিয়ে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, মানুষকে বুঝাতে হবে, প্রবাসে গেলেই তুমি কাজ পাবে না। পাশাপাশি আমরা দীর্ঘদিন থেকেই লাখ লাখ কর্মী পাঠাচ্ছি কিন্তু তাদেরকে দক্ষ করে তুলছি না। ফলে দিন দিন তাদের সাথে হয়রানি বাড়ছে। এ বিষয়ে জোর দেয়ার আহ্বান জানান এই বিশেষজ্ঞ।

সৌদি আরবের কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতারণা ঠেকাতে সরকারি পর্যায়ে কর্মী নেয়া শুরু করেছে তারা। তাই বৈধ উপায়ে কম খরচে সৌদি যাওয়ার পরামর্শও তাদের।

দেশটির মুসানেড প্রোগ্রামের সিনিয়র ডাইরেক্টর আহমেদ অ্যালাঙ্গেরি বলেন, জুলাই মাস থেকে আমরা নতুন নিয়ম চালু করেছি। কর্মীরা তাদের কন্ট্রাক্ট দেখতে পাবে। কী করতে হবে তা-ও জানতে পারবে। এছাড়া নতুন ওয়েজবোর্ড সিস্টেম চালু করা হয়েছে; যাতে তাদের মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.