সম্পর্ক জোরদারে ‘সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায়’ আগ্রহী নয়াদিল্লি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব

0
11
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ফেসবুক থেকে নেওয়া

নয়াদিল্লি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারে ‘সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায়’ আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ঢাকায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।

আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এ কথা জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, ‘সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই। আমরা এটাকে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হিসেবে দেখি।’ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে আলোচনায় বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, ‘আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চাই।’

প্রায় ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে সংখ্যালঘু ইস্যু, অপতথ্য প্রচার, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে।’ প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে ‘খুবই দৃঢ়’ ও ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে কিছু মেঘ জমে ছায়া তৈরি করেছে। এই ‘কালো মেঘ’ মুছে ফেলতে ভারতের সাহায্য চেয়েছেন ড. ইউনূস।

আলোচনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁর প্রসঙ্গও উঠে আসে। গত ১৫ বছরের নির্মম ও দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসনের বর্ণনা করে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের লোকজন উদ্বিগ্ন; কারণ, তিনি সেখান (ভারত) থেকে অনেক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।’

বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, তিনি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় প্রতি ঘণ্টায় বাংলাদেশের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতা কীভাবে এক হয়ে শেখ হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলের অবসান ঘটিয়েছে, তার একটি বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো তরুণদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ।’ এ সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেন।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব বিদেশি নেতা তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামনের সারিতে আছেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের ন্যারেটিভ (বয়ান) এবং ভারত সরকারের ধারণা ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনার সাফল্য কামনা করি।’

‘বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রয়েছে, এটা ভুল ধারণা’ উল্লেখ করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়; বরং সকলের জন্য।’

বৈঠকে ড. ইউনূস বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনায় ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ভারতকে তাঁর উদ্যোগে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সবার জন্য একটি সমৃদ্ধ নতুন ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।’ বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত সার্কের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু বাধা রয়েছে।

সংখ্যালঘু বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রতে৵ক নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গনির্বিশেষে সবার অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি পরিবার। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ভারত গত মাসে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়াবে। ‘আমরা আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই,’ বলেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.