বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে গোল ঠেকালেন মার্তিনেজ

0
7
অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় গোললাইন থেকে বল ঠেকান ভিলার আর্জেন্টাইন গোলকিপার মার্তিনেজ, রয়টার্স

ভিলা পার্কে তাঁর রাতটা শুরু হয়েছিল দুই সন্তানকে নিয়ে মাঠে হেঁটে। চারপাশে গ্যালারিভর্তি দর্শক। তাঁদের সামনে গত দুই বছরে জেতা গোলকিপারদের ব্যালন ডি’অর (ইয়াশিন ট্রফি) দুই হাতে উঁচিয়েও দেখালেন। তখনো যাঁদের মনে সন্দেহ, তিনি এই পুরস্কারের যোগ্য কি না—সেই সব ‘বিচক্ষণ’ দর্শক থেকে বিশ্লেষকদের জন্য সৃষ্টিকর্তা বোধ হয় একটি চমক ঠিক রেখেছিলেন। নইলে ওই গোলটি ঠেকায় সেই সাধ্য কার!

শুধু এমিলিয়ানো মার্তিনেজের। তার আগে ছিলেন সম্ভবত গর্ডন ব্যাংকস। ৫৪ বছর আগে-পরের দুজনকে একই মোহনায় মেলানোর কারণ গোল ঠেকানোয় তাঁদের অকল্পনীয় ক্ষিপ্রতা। এক কথায় অবিশ্বাস্য!

অ্যাস্টন ভিলার পোস্টে দাঁড়িয়ে মার্তিনেজ গতকাল রাতে কী করেছেন, তা এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনার জানা বা দেখা। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে মার্তিনেজের ডান দিকের পোস্টের খুব কাছ থেকে জোরের ওপর হেড করেছিলেন জুভেন্টাস উইঙ্গার ফ্রান্সিসকো কনসেইসাও। তারপর ভিলার আর্জেন্টাইন গোলকিপারের রিফ্লেক্স দেখে বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলে যেতে পারে। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ডান হাতটা গোললাইনের পেছন থেকে টেনে এনে বলটা সেভ করেন মার্তিনেজ।

ভিডিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, বলের পুরোটা গোললাইন প্রায় পেরিয়েই গিয়েছিল (কয়েক সেন্টিমিটার বাকি ছিল), কিন্তু মার্তিনেজের হাত অনেকটাই বড়শির মতো গেঁথে বলটাকে পেছনে ফিরিয়েছে। কিংবা এভাবেও ভাবতে পারেন, ডান হাতটা গোল লাইনের পেছন থেকে নিয়ে এসেছিলেন বলেই বলটা গোললাইন পেরোনোর আগেই তাঁর হাত সরাসরি ধাক্কা মেরে ফিরিয়ে দিয়েছে। ডাইভ দিয়ে আড়াআড়ি হাত পাতলে বলটা না ঠেকার সম্ভাবনাই ছিল বেশি।

ম্যাচ শুরুর আগে দুই সন্তানকে নিয়ে মাঠে দর্শকদের দুটি ইয়াশিন ট্রফি দেখান মার্তিনেজ
ম্যাচ শুরুর আগে দুই সন্তানকে নিয়ে মাঠে দর্শকদের দুটি ইয়াশিন ট্রফি দেখান মার্তিনেজরয়টার্স

১৯৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে পেলের হেডও শরীরের পেছন দিকে ডাইভ দিয়ে অকল্পনীয় ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের প্রয়াত গোলকিপার ব্যাংকস। সেই সেভকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা সেভ হিসেবেই ধরা হয়। মার্তিনেজের ক্যারিয়ারসেরা সেভ সম্ভবত গত বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের র‌্যান্ডল কোলো মুয়ানির শটে। কিন্তু কৌশলগত বিশ্লেষণে ব্যাংকসের সেই সেভের সঙ্গে মার্তিনেজের কাল রাতের সেভের মিলই বেশি। ব্যাংকসের মতো মার্তিনেজেও শরীরের পেছন দিকে ডাইভ দিয়েছিলেন, সঙ্গে বাজপাখির থাবার ছোবলের মতো ক্ষিপ্রতা তো ছিলই। তাতে জুভেন্টাসও গোল পায়নি। ০-০ ড্রয়ে উল্টো পয়েন্ট কেড়েছে অ্যাস্টন ভিলাই।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে এসি মিলান ও ১৯৯৯-০০ মৌসুমে চেলসির পর তৃতীয় দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘরের মাঠে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচেই ক্লিন শিট (গোল হজম করেনি) রাখল ভিলা। সব মিলিয়ে এ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫ ম্যাচের ৪টিতেই ক্লিন শিট পেয়েছেন ইংলিশ ক্লাবটি। সেটা যে মার্তিনেজের সৌজন্যে তা না বললেও চলে। ৫ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে নবম উনাই এমেরির দল।

অন্যান্য ম্যাচের খবর:

মোনাকোর মাঠে দুবার পিছিয়ে পড়েও ৩-২ গোলে জিতেছে বেনফিকা। দুটি গোল বানিয়েছেন বেনফিকার আর্জেন্টাইন উইঙ্গার আনহেল দি মারিয়া। ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে ১৪তম পর্তুগিজ ক্লাবটি। স্টুটগার্টকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে রেড স্টার বেলগ্রেড। ৫ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগে তুলে নেওয়া জয়ে ৫ ম্যাচে মোট ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে ৩১তম সার্বিয়ান ক্লাবটি।

শাখতারের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৩-২ গোলে জিতেছে ডাচ ক্লাব পিএসভি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে ৮৬ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও প্রথম দল হিসেবে তুলে নেওয়া জয়ে ৫ ম্যাচে মোট ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে ১৮তম পিএসভি। সেল্টিক-ব্রুগা ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। ৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে ২০তম স্কটিশ ক্লাবটি। দিনামো জাগরেবের মাঠে ৩-০ গোলে জিতেছে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। ৫ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে চতুর্থ জার্মান ক্লাবটি।

এক নজরে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফল:

রেড স্টার বেলগ্রেড ৫-১ স্টুটগার্ট
স্টার্ম গ্রাৎস ১-০ জিরোনা
অ্যাস্টন ভিলা ০-০ জুভেন্টাস
বোলোনিয়া ১-২ লিল
সেল্টিক ১-১ ব্রুগা
জাগরেব ০-৩ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড
লিভারপুল ২-০ রিয়াল মাদ্রিদ
মোনাকো ২-৩ বেনফিকা
পিএসভি ৩-২ শাখতার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.