হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু রহস্যের জট খুলল

0
19
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী
মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য আর নেই। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ঘিরে নেওয়া হয় মিথ্যার আশ্রয়। তাকে দাফন করা হয় ভিন্ন নামে। অবশেষে সেই মিথ্যার জট খুলেছে। জানা গেছে, মাহমুদুর রহমান নামে ঢাকার সাভারে দাফন করা মানুষটিই হারিছ চৌধুরী। আর এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে ডিএনএ রিপোর্টের মাধ্যমে।
 
বুধবার (৬ নভেম্বর) আদালতে এই ডিএনএ রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়।
 
এর আগে, গত ৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিতে তার মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
 
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী তখন বলেন, বাবাকে মিথ্যা মামলায় হেনস্তা করা হয়েছে বারবার। তার মৃত্যু নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হয়, যা অত্যন্ত বেদনার। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক। তাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি। আমরা চাই, লাশের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ধোঁয়াশা যেন দূর হয়।
 
তিনি আরও বলেন, ৬৮ বছর বয়সে বাবা ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। পরে ঢাকার অদূরে সাভারে একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
 
এরপর গত ১৬ অক্টোবর সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর জালালাবাদ এলাকার জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদরাসা কবরস্থান থেকে ডিএন পরীক্ষার জন্য মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা হারিছ চৌধুরীর লাশটি কবর থেকে তোলা হয়।
 
পরে ২১ অক্টোবর হাইকোর্টের আদেশে হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত করতে তার মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডি কার্যালয়ে ডিএনএ নমুনা জমা দেন।
 
সে সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয়, বাবাকে দাফনের পরও আপনাকে ডিএনএ নমুনা দিতে হচ্ছে। এই বিড়ম্বনার পেছনে আসলে কারা দায়ী?
 
উত্তরে তিনি বলেন, এই বিড়ম্বনার জন্য বিগত সরকার দায়ী। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত প্রশাসন এর জন্য দায়ী। প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি এবং স্বৈরাচারমূলক আচরণের কারণে আমাকে এই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
 
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ডিএনএর নমুনা পরীক্ষার দুই সপ্তাহ পরেই সাভার থানা পুলিশকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। এর আগে, গত ১৬ অক্টোবর সাভার থানায় হারিছ চৌধুরীর লাশ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। সেই জিডির রেফারেন্সেই এই ডিএনএ পরীক্ষা হয়।
 
এ বিষয়ে জানতে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) কামারুন মুনিরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আদালতের। তাই এ ব্যাপারে আমাদের কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই।
 
তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিয়া। তিনি বলেন, তিন দিন আগেই আমরা ডিএনএ রিপোর্টটি আদালতে জমা দিয়েছি। রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। আর লাশটি হারিছ চৌধুরীরই বলে জানা গেছে।
 
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর বাবার পরিচয় শনাক্তে মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। আদালত তখন লাশ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দেন।
 
এর আগে, হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হয়। এ ছাড়া দুদকের দুর্নীতি মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার যথাক্রমে তিন ও সাত বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেন আদালত।
 
একইসঙ্গে ২০১৮ সালে ইন্টারপোলে হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ ইস্যু করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.