উত্তরের চার জেলায় পানিবন্দী ২৩ হাজার পরিবার

0
44
বাড়িঘরে পানি ঢোকায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছেন এক নারী। গতকাল রংপুরের কাউনিয়ার পাঞ্জরভাঙ্গা এলাকায়

কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে নদীতীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উত্তরের চার জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও রংপুরে ২৩ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এদিকে গত শনিবার ও গতকাল রোববার তিস্তা নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে গতকাল তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সকাল ছয়টায় পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে দুপুরের পর থেকে পানি আবার বিপৎসীমার নিচে নামতে থাকে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।

কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। মহিষখোচার গোবর্ধন গ্রাম, আদিতমারী, লালমনিরহাট, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। মহিষখোচার গোবর্ধন গ্রাম, আদিতমারী, লালমনিরহাট, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ শাখা জানিয়েছে, তিস্তার পানি বেড়ে জেলার পাঁচটি উপজেলার চারটিতে ১৭ হাজার ৩৫০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৭ হাজার ৫০০ পরিবার, হাতীবান্ধায় ৫ হাজার ৬৫০, আদিতমারীতে ৩ হাজার পরিবার এবং কালীগঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

আদিতমারীর মহিষখোঁচার মোখলেছার রহমান (৪৫) বলেন, ‘মোর বাড়ির উঠানসহ চারদিকত তিস্তার পানি উঠি জলবন্দ হইছে। সড়কের ওপরত আছোং পরিবার নিয়া। কাজকাম নাই। খুব সমস্যা।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির দিকে জেলা, উপজেলা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ নজর রাখছে। ইতিমধ্যে দুর্গত পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণসহায়তা হিসেবে ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বন্যার পানিতে প্লাবিত তিস্তা বেষ্টিত এলাকা। বাইশপুকুর গ্রাম, ডিমলা, নীলফামারী, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
বন্যার পানিতে প্লাবিত তিস্তা বেষ্টিত এলাকা। বাইশপুকুর গ্রাম, ডিমলা, নীলফামারী, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

এদিকে তিস্তার পানি বেড়ে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নদীতীরবর্তী ১৫টি গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খাঁন বলেন, ‘পূর্ব ছাতনাই ও ঝাড়সিংহেরস্বর মৌজার প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারের বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বাড়তে থাকায় মানুষজন আতঙ্কের মধ্যে আছেন।’

পাউবো নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘শনিবার দিবাগত রাতে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। রোববার দুপুরের পরে পানি আবার বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তা ব্যারাজের সব কটি জলকপাট (৪৪টি) খুলে রাখা হয়েছে।’

 তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল।  গতিয়াশাম গ্রাম, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল। গতিয়াশাম গ্রাম, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তিস্তা নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রামে নদীতীরবর্তী এক হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া তিস্তা ছাড়াও জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। পাউবোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ধরলা, গঙ্গাধর, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

তিস্তার পানি বেড়ে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। নদীতীরবর্তী উপজেলার ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাউবো সূত্রে জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাতে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র রংপুর থেকে গতকাল জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও তিস্তার পানি বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে কাউনিয়া ছাড়াও পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলায় নদীপারের মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পাউবো রংপুরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব গতকাল বলেন, ‘এই পানি নেমে যাবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.