টানা এক বছরের আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ লেবাননেও সামরিক আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরায়েল। স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে মাত্র ৬ দিনে সাত শতাধিক লেবানিজের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। পাঁচ লক্ষাধিক বাসিন্দা ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গত কয়েকদিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনে। মার্কিন মদদপুষ্ট হওয়ার কারণেই ইসরায়েল কাউকে তোয়াক্কা করে না, এ অভিযোগ বেশ পুরোনো। ব্যাপারটা আবারও স্পষ্ট হলো।
গাজা ও লেবাননে চলমান সামরিক আগ্রাসনের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া হয়ে ওঠা দেশটির প্রতিরক্ষা খাতে আরও ৮৭০ কোটি মার্কিন ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে এই সামরিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে তাদেরকে ।
গত সোমবার থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। গত সোমবার থেকে লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত সাত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। পাল্টা হামলা চালাচ্ছে লেবাননের হিজবুল্লাহও। তবে, এর অধিকাংশই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাছে।
এমন অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংঘাত নিরসনে সমাধানের পথ বের করতে গত বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ১১টি দেশ ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে তিন সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রস্তাব দেয়। তবে যুদ্ধবিরতির সে প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। বিরামহীনভাবে চলছে ইসরায়েলের বিমান ও ড্রোন হামলা।
এ অবস্থার মধ্যেই ইসরায়েলকে বড় সামরিক সহায়তার খবর সামনে এলো। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইয়াল জামির ও মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মধ্যে পেন্টাগনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠক শেষেই মার্কিন এ বিশাল সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।
এই প্যাকেজের অর্থ দুইভাগে দেওয়া হয়েছে। একভাগে রয়েছে ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলারের যুদ্ধকালীন অপরিহার্য সমস্ত দ্রব্য ক্রয়ের খাতে বরাদ্দ, যা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। আর বাকি ৫২০ কোটি মার্কিন ডলার রাখা হয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরায়েলের জটিল ও সংবেদনশীল নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে মার্কিন এই বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর মধ্যে রয়েছে আয়রন ডোম নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডেভিড’স স্লিং ও অত্যাধুনিক উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।’
প্রসঙ্গত, ইসরাইলের সুরক্ষায় নিয়মিত সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সহায়তার পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। গত মাসেই ইসরায়েলকে ৩৫০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন।