১০ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ রেখে গেছে শেখ হাসিনা সরকার

0
55
বাংলাদেশ ব্যাংক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ১০ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ রেখে গেছে শেখ হাসিনা সরকার।
 
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
 
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশে বিদেশি ঋণের মোট পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন (১০ হাজার ৩৭৯ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে। প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮৩.২১ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ, প্রায় ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা সরকারের নেওয়া। এতে সরকারের নিজস্ব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারি সংস্থার ঋণ রয়েছে। বাকি ঋণের দায় বেসরকারি খাতের।
 
অর্থনীতিবিদদের মতে, বেশি হারে সুদ ও কঠিন শর্তে নেওয়া এসব ঋণ সরকারি সংস্থাগুলোর দেওয়া পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে।
 
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই সময় অর্থাৎ ২০০৮-০৯ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণ ছিল ৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত ১৫ বছর ৮ মাসের ব্যবধানে দেশে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে সরকার ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন (৯ হাজার ৯৩ কোটি) ডলার। অর্থাৎ তিন মাসেই প্রায় ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ নেয় বিগত সরকার।
 
বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে। যদিও বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেওয়াকে সবসময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি ঋণও নেওয়া হয়েছে। তবে এসব ঋণের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে দর–কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে; যা সরকারের দায়-দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে।
 
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট তৈরি হওয়ার পর মার্কিন সুদের হার বেড়ে যায়। এর প্রভাবে বিদেশি ঋণেও সুদের হার বেড়ে যায়। পাশাপাশি দেশের টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের ফলে বিপাকে পড়ে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ীরা। এজন্য বিদেশি ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধে মনোযোগী হয় তারা। কিন্তু ডলারের দর স্থিতিশীল হওয়া ও দেশে ঋণে সুদের হার বাড়তে থাকায় বিদ্যমান পরিস্থিতির মধ্যেই ফের বিদেশি ঋণ নিতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা।
 
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত করেছে কিংবা বাস্তবায়ন করছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। মূলত এই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়েই বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার।
 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.