চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের সরবরাহ কমেছে। ক্রেতাদের চাহিদা থাকলেও তা পূরণ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। যার ফলে স্থানীয় পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশের দাম এখনও অনেক চড়া। এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১ হাজার ৭০০ টাকা। ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতির মাছ বিক্রি করে আড়তগুলো এখন অনেকটা সরগরম।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে চাঁদপুর মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম আড়তগুলো। দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য বক্স করা হচ্ছে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ। নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আসা ইলিশ ট্রাক থেকে নামিয়ে স্তুপ করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিক হাকডাক দিয়ে বিক্রি হচ্ছে আড়তে। ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে মাছ ঘাটে এসে ভিড়ছে জেলে নৌকা। তারা স্থানীয় পদ্মা-মেঘনা থেকে ধরে আনা ইলিশ বিক্রি করছেন আড়তে।
জেলে মুছা পাটওয়ারী, সোলায়মানসহ কয়েকজন জেলে বলেন, ঋণ করে কেনা জাল এবং নৌকা মেরামত করে নদীতে মাছ শিকারে নদীতে নেমেছি। নদীতে ইলিশ কম। তবে দাম ভাল পাচ্ছি। আর একমাস পরে মা ইলিশ রক্ষায় আসবে নিষেধাজ্ঞা। তাই আমাদের চিন্তা এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো।
মাছ কিনতে আসা স্থানীয় মোস্তফা কামাল ও নাছির খান বলেন, স্বজনদের জন্য ঢাকায় পাঠাতে বেশ কয়েক কেজি ইলিশ কিনেছি। স্থানীয় প্রতিকেজি ইলিশ এখনও ১ হাজার ৬শ’ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা। আরও বেশি ইলিশ ক্রয় করার ইচ্ছা থাকলেও বেশি দামের কারণে কিনতে পারিনি।
নরসিংদী থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন এসএম শাহীন। তিনি বলেন, ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুর মাছঘাটে এসেছি কম দামে ইলিশ কিনতে। কিন্তু এখানে এসে দেখি ভিন্ন চিত্র। ইলিশের দাম অনেক বেশি। ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৭শ’ টাকা। কি কারণে ইলিশের দাম এত বেশি বুঝতে পারছি না।
ভাই ভাই মৎস্য আড়তের দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী বলেন, স্থানীয় ইলিশের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। তবে দাম কমেনি। ইলিশের পাশাপাশি পোয়া, চিংড়ি ও দেশীয় চাষের মাছও ঘাটে বিক্রি হচ্ছে।
মেসার্স মিজানুর রহমান ভুঁইয়া আড়তের ম্যানেজার ওমর ফারুক বলেন, গত বছর এই সময় দেড় থেকে দুই হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। এবার কমেছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি মণ ৩০-৩৫ হাজার টাকা। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ইলিশ প্রতিকেজি ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা। ১ কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা। আর ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি ১৮০০ থেকে ২১০০ টাকা। তবে দক্ষিণাঞ্চলের হাতিয়া থেকে আসা ইলিশ প্রতিকেজি ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক হাজী শবে বরাত সরকার বলেন, মাছঘাট এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ঘুরতে আসেন। আবার ইলিশ মাছও ক্রয় করেন। ক্রেতাদের চাহিদার আলোকে সরবরাহ অনেক কম। যে কারণে দামও কিছুটা বেশি। এখন প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৭শ’ মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আড়তগুলোতে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি, পোয়া ও চাষকৃত মাছ।