ক্রিকেটে বড় স্বপ্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অনিকের

0
66
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার অনিক দেব বর্মণ, বিসিবি

সপ্তাহখানেক হলো মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলছে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের বিশেষ ক্যাম্প। ২০২৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ সামনে রেখে সারা দেশ থেকে বাছাই করা ৩০ ক্রিকেটার নিয়ে হচ্ছে ক্যাম্পটি। এখান থেকেই দলটাকে আরও ছোট করে আনার পরিকল্পনা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের নির্বাচকদের।

মিরপুরে এই উঠতি ক্রিকেটারদের অনুশীলনে চোখ রাখলে সবার আগে দৃষ্টিটা গিয়ে পড়ে অনিক দেব বর্মণের দিকে। ছয় ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা এই পেসার উচ্চতার কারণেই বাকিদের চেয়ে আলাদা। তবে অনিককে চোখে পড়ার অন্য কারণও আছে।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে এর আগে কোনো পুরুষ ক্রিকেটার এই পর্যায়ে আসেনি। সেদিক দিয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অনিক দেব বর্মণ দেশের ক্রিকেটের একটা জায়গায় পথিকৃৎই হয়ে থাকবেন।

কয়েক দিন ধরে স্বাভাবিকভাবেই সংবাদমাধ্যমের কৌতূহল অনিককে নিয়ে। সেই কৌতূহল দূর করতেই আজ মিরপুর স্টেডিয়ামে যুবাদের নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে খেলা প্রস্তুতি ম্যাচের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের সামনে আনা হলো অনিককে। জড়তা মেশানো কণ্ঠে অনিক শোনালেন নিজের ক্রিকেটে আসার গল্প, ‘আমাদের গ্রামে বেশির ভাগ মানুষই ফুটবল খেলে। ক্রিকেট খেলার মতো মাঠ নেই। ফুটবল মাঠে খেলেই আমি বড় হয়েছি। মাঠটা একদম ছোট।’

ছোট মাঠে খেলেই অনিক দেখেছেন বড় স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা ছিল পরিবার থেকেই। ক্রিকেটার হয়ে উঠতে ফাঁকি দিয়েছে বাবার চোখ, ‘আমার পরিবারের কেউ শুরুতে সমর্থন দিত না। তখন আমি পালিয়ে খেলতাম। আমাকে মানুষ বাসা থেকে খেলতে নিয়ে যেত। বাবা নিষেধ করতেন। খেলে কী করব, বলতেন। তবু আমি পালিয়ে খেলতাম। মারও খেতাম (হাসি)।’

ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর ছেলে অনিক দেব বর্মণ, বিসিবি

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার কালিগুচিয়া গ্রামের ছেলে অনিক। টিভিতে ক্রিকেট দেখেই খেলাটার নেশা পেয়ে বসে ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর অনিককে। নিজের গ্রামে ক্রিকেট খেলার মতো বড় মাঠ ছিল না বলে ছোট জায়গায় হাত ভেঙে বোলিং করতে করতেই ক্রিকেট খেলা শুরু অনিকের। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শ্রীমঙ্গলে চলে আসে তাঁর পরিবার। পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে ক্রিকেট খেলার সুযোগটা একটু বেশি ছিল। শ্রীমঙ্গলের ছোট্ট একটি একাডেমি থেকে শুরু, এরপর মৌলভীবাজার জেলার অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ের ট্রায়ালে দুই দফা ট্রায়াল দেন অনিক।

পরে হবিগঞ্জ জেলা থেকে ট্রায়াল দিয়ে খুঁজে নেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। সেখানে কোচদের নজরে আসার পর অনিকের বোলিংয়ের ভিডিও পৌঁছে যায় বিসিবির কোচ ও সাবেক পেসার নাজমুল হোসেনের কাছে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এ বছরের শুরুতে শেখ কামাল অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নেন অনিক। সেখানে ভালো করায় জায়গা পেয়ে যান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯–এর প্রাথমিক দলে।

সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলনে অনিক দেব বর্মণ, বিসিবি

জাতীয় দলের তারকা পেসার তাসকিন আহমেদ অনিকের অনুপ্রেরণা। দেশের বাইরে শোয়েব আখতার ও ব্রেট লির বোলিং খুব পছন্দ। তাসকিনদের দেখানো পথ ধরেই এখন জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন অনিক, ‘আমার স্বপ্ন, আমি একদিন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলব। এখন যে মঞ্চটা পেয়েছি, মনে হচ্ছে সামনে এগোতে পারি।’

সেটা হলে অনিকের তো বটেই, ক্রিকেট নিয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরও একটা স্বপ্ন পূরণ হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.