‘আয়নাঘর’ থেকে ফিরে যে ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন মাইকেল চাকমা

0
54
মাইকেল চাকমা
‘যেভাবে তারা রাখে এটাতো অত্যন্ত অমানবিক। এটা তো মানুষের বসবাসের জায়গা না। মানুষ এভাবে বাঁচে না। এটাতো কবরের মতো। গুহা আছে না গুহা, গুহায় থাকলে মানুষ যেভাবে কিছুই দেখে না, কবরে থাকলে মানুষ যে কিছুই দেখে না ঠিক এই রকম। এটাতো মানুষের বাঁচার মতো কোনো জায়গা না। কোনো জানালা নাই, একদম কোনো আলো ঢোকে না, বাতাস ঢোকে না শুধু চারিদিকে দেয়াল।’
 
শনিবার (১৭ আগস্ট) বিবিসিকে এভাবেই ‘আয়নাঘর’ খ্যাত গোপন বন্দিশালায় নিজের সঙ্গে হওয়া অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা।
 
তিনি বলেন, ‘ছেড়ে দেওয়ার আগে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার রাতটিকে জীবনের অন্তিম সময় হিসেবেই ভেবে নিয়েছিলাম। শেষ রাতে আমাকে গাড়িতে নেওয়ার সময় কিছুটা আলগা করে চোখে কাপড় বাঁধা ছিল, যেটি এক পর্যায়ে গাড়ির সিটে ঘসে ঘসে কিছুটা নামাতে সক্ষম হন। এবং আজানের পর কিছুটা আলোর দেখা পাই। ২০১৯ সালের পর ৬ আগস্ট ২০২৪ সালে প্রথম দিনের আলোর দেখা পাই আমি। তবে আমাকে যে এদিন ছেড়ে দেওয়া হবে সেটি কল্পনাও করতে পারিনি।
 
মাইকেল চাকমা বলেন, ‘আমার জীবনের এই প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর যারা শেষ করে দিয়েছে তাদের বিচার করতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী এর সঙ্গে জড়িত ছিল। আমি কিছুটা সুস্থ্ ও স্বাভাবিক হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সরকারের কাছে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করবো।’
 
ইউপিডিএফ-এর সংগঠক বলেন, ‘গত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরে আমাকে বেশ কয়েকটি গোপন কারাগারে রাখা হয়েছে। শুরুর দিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে আমাকে কোনো মারপিট করা হয়নি। যেভাবে একাকী বন্দি করে রাখা হয় এবং যে পরিবেশে রাখা হয় সেটি অত্যন্ত অমানবিক এবং ভয়ংকর রকমের মানসিক অত্যাচার।’
 
তিনি বলেন, ‘যেভাবে তারা রাখে এটাতো অত্যন্ত অমানবিক। এটাতো মানুষের বসবাসের জায়গা না। মানুষ এভাবে বাঁচে না। এটাতো কবরের মতো। গুহা আছে না গুহা, গুহায় থাকলে মানুষ যেভাবে কিছুই দেখে না, কবরে থাকলে মানুষ যে কিছুই দেখে না ঠিক এই রকম। এটাতো মানুষের বাঁচার মতো কোনো জায়গা না। কোনো জানালা নাই, একদম কোনো আলো ঢোকে না, বাতাস ঢোকে না শুধু চারিদিকে দেয়াল।’
 
মাইকেল চাকমা যেসব নির্জন ঘরে বন্দি ছিলেন সেগুলোর বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘কোনো কোনো রুম সাত ফিট বাই এগারো ফিট, কোনো রুম ছিল আট ফিট বাই এগারো বা বারো ফিট এরকমের। মানে একদম ছোট ছোট রুম। ওখানে একটা খাট আছে তিন ফিট বাই সাত ফিটের লোহার। কোনো জায়গায় কাঠের।’
 
তিনি আরও বলেন, এই দীর্ঘ সময়ে ঘুরেফিরে ৪-৫টি বন্দিশালায় তাকে রাখা হয়। এসব বন্দিশালায় আরো মানুষ আটক ছিলেন বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
 
গত পাঁচ বছরের বেশি সময়ে তার সঙ্গে রাখা হয়েছে আরও দুজনকে। এ ছাড়া অদেখা দুজনের নাম তিনি শুনতে পেয়েছেন। তবে এইসব বন্দির ভাগ্যে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই মাইকেল চাকমার।
 
রাজধানীর শ্যামলী থেকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমাকে। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গেল পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়েছিল। যেটি ‘আয়নাঘর’ নামে অনেকের কাছে পরিচিত। গত ৬ আগস্ট মাইকের চাকমাকে চট্টগ্রামের একটি সড়কের ধারে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়। বন্দিদশা থেকে ফিরে জানতে পারেন পূত্র শোক বুকে নিয়ে তার বৃদ্ধ পিতা মারা গেছেন। মাইকেল চাকমা আর জীবিত নেই ধরে নিয়ে রীতি মেনে তার শেষকৃত্যও করেছে পরিবার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.