সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছে তেহরান। ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে জানানো হয়েছে, হামলা হলে বসে থাকবে না তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইরানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস, ইসলামিক জিহাদ, ইয়েমেনের সশস্ত্র হুতি বিদ্রোহী, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ ও ইরাকের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসার কথা ছিল ইরানের প্রতিনিধিদের। তেহরানে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় ইসরায়েলে হামলা চালানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় খোঁজা হবে।
আলোচনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামিনি ও প্রভাবশালী রেভল্যুশনারি গার্ডস বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্তকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন ইরানের আরেকজন কর্মকর্তা। আর ইরানের সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামলা অবশ্যই চালানো হবে। কোনো সন্দেহ নেই নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে অনুতাপ করতে হবে।
তেহরানে গত বুধবার ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে হামাস ও ইরান। তবে এর দায় এখনো স্বীকার করেনি ইসরায়েল।
হিজবুল্লাহর রকেট হামলা
ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার এক দিন আগে গত মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কাছে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা ফুয়াদ শুকর। এরপর বৃহস্পতিবার ফুয়াদের দাফনের সময় দেওয়া ভাষণে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ হত্যার জবাব দেওয়া হবে। ইসরায়েল জানে না, কোনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তারা।
বৃহস্পতিবারই হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে কয়েক ডজন কাতিউশা রকেট ছুড়েছে তারা। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের শামা গ্রামে ইসরায়েলের হামলার জবাবে এ রকেট ছোড়া হয়েছে। গ্রামটিতে চালানো হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক মানুষ নিহত হন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই দেশটির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে হিজবুল্লাহ। হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রায়ই উত্তর ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ছে তারা। পাল্টা জবাব দিচ্ছে ইসরায়েলও। এএফপির হিসাবে, গত ১০ মাসে ইসরায়েলের হামলায় ৫৪২ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই হিজবুল্লাহর সদস্য। বেসামরিক মানুষ রয়েছেন ১১৪ জন।
বাইডেনের সমর্থন
ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা নিহত হওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় আবারও নেতানিয়াহুকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন। একই সঙ্গে ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের সব হুমকির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে থাকার কথা বলেছেন তিনি।
গাজায় হামলার শুরু থেকে ইসরায়েলকে এককাট্টা সমর্থন দিয়ে আসছিলেন বাইডেন। তবে উপত্যকাটিতে বিপুল পরিমাণ প্রাণহানির মুখে যুদ্ধবিরতির চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিল তাঁর প্রশাসন। যদিও সেসব প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে দেওয়া এক বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাইডেন। বলেছেন, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা যুদ্ধবিরতির চুক্তির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি
হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতাকে হত্যার পর যেকোনো হামলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ইসরায়েলও। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েল প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের ওপর কোনো আগ্রাসন চালানো হলে, তার হিসাব ভালোমতো চুকিয়ে দেওয়া হবে। কেউ যদি আমাদের ওপর হামলা চালায়, তার জবাবে পাল্টা হামলা চালানো হবে।’
বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহ নেতা নাসারাল্লাহর হুমকির পর একই কথা বলেছিলেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। তাঁর কড়া ভাষ্য ছিল, ‘ভারী মূল্য চোকানোর আগে বড় বড় কথা, হুমকি ও মিথ্যা বলা বন্ধ করুন নাসারাল্লাহ। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে পূর্ণ শক্তি খাটাব আমরা।’
রয়টার্স