২ জনের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত

0
61
মাহাতাব জামাল মাহিন, ইনতিজার সৃজন চৌধুরী

এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহাতাব জামাল মাহিন গত ১৮ জুলাই দুপুরে টিউশনি শেষে দুই বন্ধু ইনতিজার সৃজন চৌধুরী ও নাইমের সঙ্গে ফিরছিল বাসায়। পথে যাত্রাবাড়ীর সাদ্দাম মার্কেটের সামনে রিকশা থামিয়ে তাদের আটক করে পুলিশ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল ওই দিন মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের অভিভাবক আশপাশের সব থানা এবং হাসপাতালে খোঁজ না পেয়ে ধরেই নিয়েছিলেন, তারা আর বেঁচে নেই। পরদিন তাদের খোঁজ পেলেও জানতে পারেন– দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন হরতালে নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততাহীন এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ এ তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবক এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায়।

মাহিনের বাবা জামাল উদ্দিন বাসের জানান, ১৮ জুলাই ছেলে টিউশনির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। দুপুরেই ফেরার কথা। কিন্তু রাতেও না ফিরলে আশপাশের সব থানায় খুঁজলেও তাদের পাওয়া যায়নি। পরে জানতে পারেন, মাহিনকে হরতালে সময়ের বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর পর চিফ জুডিশিয়াল আর জজকোর্টে আবেদন করেও জামিন মেলেনি। এর মধ্যে কোটা আন্দোলন পরিস্থিতিতে স্থগিত ছেলের এইচএসসি পরীক্ষা ফের শুরু হচ্ছে। জামিন না মেলায় তার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গতকাল বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষার সংশোধিত রুটিন প্রকাশ করেছে। সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ আগস্ট থেকে ফের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এ নিয়ে জামাল উদ্দিন বলেন, মাহিন কখনও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। এমনকি আমি নিজেও রাজনীতি করি না। এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাওয়া মাহিন এ বছর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। এ পর্যন্ত সাতটা পরীক্ষা ছেলের অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু সামনের দিনের পরীক্ষাগুলো দিতে পারবে কিনা সন্দিহান। ছেলের জামিন না মেলায় ওর মা রাবেয়া খানম অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

ইনতিজার সৃজনের বড় ভাই সায়মন বলেন, মাহিন আর সৃজন দু’জনে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী। আর নাঈম পলিটেকনিকের ছাত্র। আমার ভাই অনেক মেধাবী। বাবা প্রবাসী আর আমি একটি কোম্পানিতে কাজ করি। আমাদের স্বপ্ন সৃজন পড়াশোনা করে ভালো কিছু করবে। কিন্তু এখন যদি পরীক্ষায় না বসতে পারে তাহলে ওর কী হবে?

সৃজনের ফুফু ও আইনজীবী মোবাশ্বেরা বেগম বলেন, পুলিশ রিকশা থেকে নামিয়ে এ তিনজনকে ডেমরা থানার পুরোনো নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় আটক করেছে। তাদের জমিনের জন্য চিফ জুডিশিয়াল আর জজকোর্টে আবেদন করা হয়। জজকোর্টে প্রথমে জামিন পেলেও পরে আর জামিনে সই পাননি। এর মধ্যে সৃজনকে জেলের ভেতরে পরীক্ষা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। মাহিনের এখনও করা হয়নি। তবে এখন যেভাবে গণগ্রেপ্তার হচ্ছে; জেলের ভেতর থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। আর ওদের বয়স ১৮-এর নিচে। জামিন না দিলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবে। এ অবস্থায় তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

লতিফুল ইসলাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.