ডলার বাজারে আবার অস্থিরতা

0
34

আইএমএফের পরামর্শে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে গত ৮ মে ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা মধ্যবর্তী দর ঠিক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সিদ্ধান্তের পর স্থিতিশীল ছিল বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। তবে গত কয়েক দিনে ডলারের দরে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খোলাবাজারে বা মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে দুই দিনে প্রতি ডলার চার টাকা বেড়ে ১২৪ টাকায় উঠেছে। ব্যাংকগুলোও বাড়তি দরে রেমিট্যান্স কিনছে। গতকাল কিনেছে ১১৯ টাকা ৬০ পয়সায়। এদিকে খোলাবাজার দর নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল থেকে বিভিন্ন মানিচেঞ্জারে অভিযান শুরু করেছে।

ব্যাংকাররা জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক অস্থিরতার প্রভাব ডলার বাজারে পড়েছে। অন্যদিকে সরকারের দমন-পীড়নের প্রতিবাদে একটি পক্ষ বৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠাতে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় হুন্ডি বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে বাড়তি দরে রেমিট্যান্স কিনতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১১৯ টাকা ৬০ পয়সা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনেছে। আগের দিন সোমবার সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা। ১৮ জুলাই দর ছিল ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায়। দর বাড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত রেমিট্যান্স পাচ্ছে না অনেক ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ১৯ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দৈনিক গড়ে যার পরিমাণ মাত্র ২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। অথচ মাসের প্রথম ১৮ দিনে এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং দৈনিক গড় ছিল ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ডলারের দর বাড়ানোর পর গত মে মাসে ২২৫ কোটি এবং জুনে ২৫৪ কোটি ডলারের রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্সে ডলারের দর বাড়লে আমদানির জন্য ব্যাংক আগের চেয়ে বেশি দর নেবে। কয়েকদিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় অনেকে হয়তো বিদেশ থেকে অর্থ পাঠাতে পারেননি। কেউ কেউ হয়তো এখনও পরিস্থিতি দেখছেন। কারফিউ আরও শিথিল করে বুধবার থেকে স্বাভাবিক লেনদেন শুরু হচ্ছে। ফলে আগামী সপ্তাহ নাগাদ হয়তো পরিস্থিতি ঠিক হয়ে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের অনেকেই ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’-এর ডাক দিয়েছেন। এ প্রচারণা যেন কাজে না লাগে, সেজন্য ব্যাংকগুলোকে দর বাড়িয়ে হলেও রেমিট্যান্স কিনতে বলা হয়েছে। এটি সাময়িক সময়ের জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে হুন্ডি কমানোর তৎপরতার অংশ হিসেবে মানিচেঞ্জারের ওপর পরিদর্শন চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডলারের দর আরেক দফা বাড়লে আমদানি ব্যয় বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হবে।

মানিচেঞ্জার ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন গতকাল জানান, হঠাৎ করে ডলার কেনার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এক দিনে প্রতি ডলারে দর ২ টাকা বেড়ে ১২৪ টাকা হয়েছে। আগের দিন ১২১ টাকা ৬০ পয়সায় কিনে তারা বিক্রি করেন ১২২ টাকায়। এর আগে ১৮ জুলাই ১২০ থেকে ১২১ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। দর আরও বাড়বে এমন আশায় অনেকেই ডলার ধরে রাখছেন। অনেকে নতুন

করে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে রাখছেন। যে কারণে ১২৪ টাকায়ও গতকাল অনেকে চাহিদা মতো ডলার পাননি।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ হিসাবে ১০ জুলাই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ কমে  দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারে। আইএমএফসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পাওয়ার পর জুন শেষে যা ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার ছিল। একই সঙ্গে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে।

প্রসঙ্গত, রেমিট্যান্স, আমদানি, রপ্তানিসহ ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যে ডলার লেনদেন হয় অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরভিত্তিক। আর চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ, সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য অনেকে বিদেশে যাওয়ার সময় নগদ ডলার বা কার্ড সঙ্গে নিয়ে যান। তদবির ছাড়া এখন আর ব্যাংক থেকে নগদ ডলার পাওয়া যায় না। ফলে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় ডলার কেনার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানিচেঞ্জারের ওপর নির্ভর করতে হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.