ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন ও কারাগারে হামলার পরিকল্পনা ছিল শিবিরের

0
56
শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পর ঢাকাকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং কারাগারে হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে তথ্য মিলেছে
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা ছিল জামায়াত-শিবিরের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দিতে পরিকল্পনা ছিল তাদের। আর এতে মুখ্য ভূমিকা পালনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল শিবিরের ঢাকা জেলা দক্ষিণ শাখাকে।

সংগঠনটির বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টেলিগ্রাম অ্যাপের থেকে পাওয়া তথ্যে এমনটা জানা গেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি, বেসরকারি স্থাপনায় আগুন, অসংখ্য যানবাহন পুড়িয়ে দেয়াসহ সরকারি স্থাপনায় হামলার ঘটনা পরিকল্পিত ছিল বলে এতে প্রমাণ মিলেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, কোটা আন্দোলন চলাকালে কারফিউ জারির পর ঢাকা থেকে পালিয়ে আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায় সহিংসতাকারীরা। এ অবস্থায় কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় শিবিরের একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে ঢাকা জেলা দক্ষিণের ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিজ্ঞান ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের জিলানী, মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হোসেন ও বেশ কয়েকজন কর্মী রয়েছেন।
 
পুলিশ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে এই আস্তানাটি শিবিরের ঢাকা জেলা দক্ষিণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হতো। ওই বাসা থেকে উদ্ধার হয়েছে শিবিরের বিভিন্ন লিফলেট ও পুস্তিকাও।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারদের জব্দ করা মোবাইল ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল শিবিরের। স্বপ্নচারী, কাশফুল, বাঁশের কেল্লাসহ বেশকয়েকটি টেলিগ্রাম গ্রুপে এসব প্রমাণ মিলেছে।
 
এদিকে সময় সংবাদের হাতে আসা তথ্য বলছে, টেলিগ্রামের স্বপ্নচারী গ্রুপে ঢাকা জেলা দক্ষিণের ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সিয়াম তার একটি বার্তায় লিখেছেন, ‘দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ সকল শাখা এখন থেকেই প্রস্তুত থাকুন। বৃহত্তর কর্মসূচি আসতে যাচ্ছে। ডাক আসার সাথে সাথে সকল জনশক্তিসহ আমজনতাকে সঙ্গে নিয়ে ময়দানে জালিমশাহির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্র গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছে। সবাই প্রস্তুতি নিন। যেকোনো সময় নেট বন্ধ করে দেয়া হবে। তাই অফলাইনে সাংকেতিক শব্দের মাধ্যমে কথা বলা হলে বাকিটা বুঝে নিবেন।’
 
টেলিগ্রামের কাশফুল গ্রুপে সিয়াম নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘আপনি আপনার থানার সভাপতি ও সেক্রেটারির সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। একই গ্রুপে আরেকজন লিখেছেন, ভাই, ককটলে প্রয়োজন। পুলিশকে প্রতিহত করার জন্য। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে বাটুল আর গুলতি তুলে দেয়ার আহ্বান জানান সিয়াম। কীভাবে বাটুল দিয়ে আক্রমণ করা যায় সেই কৌশলও শিখিয়ে দেয়া হয়।
 
এছাড়া আন্দোলনকে উসকে দেয়ার মতো অসংখ্য অডিও বার্তাও এসেছে পুলিশের হাতে। একটি অডিও বার্তায় সিয়াম, প্রবেশমুখ বন্ধ করে ঢাকা অচল করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সঙ্গে সমন্বয় করে বড় একটি আন্দোলন করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের।
 
পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান আরও বলেন, শুধু সহিংসতা, অগ্নিসন্ত্রাস এবং আন্দোলন উসকে দেয়া নয়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার দখলেরও পরিকল্পনা ছিল শিবিরের। পুরো ঢাকাকে সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
 
এদিকে কেরানীগঞ্জে আরও বেশ কয়েকটি শিবিরের আস্তানার খোঁজ পেয়েছে পুলিশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.