যে ব্রাজিল মানেই শৈল্পিক ফুটবল, সুন্দরের পসরা সাজিয়ে ছড়ায় মুগ্ধতা, জোগো বনিতার স্লোগানে হয় প্রকম্পিত, দোরিভাল জুনিয়রের দলটির মধ্যে নেই তার ছিটেফোঁটা। কার্লোস দুঙ্গা, রবার্তো কার্লোস, রোনালদিনহো, রোনালদোদের মতো ফুটবলের শিল্পীর বড় অভাব এই দলটির মধ্যে। অ্যালিসন বেকার-মারকুইনহোসদের থামিয়ে কলম্বিয়া তাদের অজেয় যাত্রাটা নিয়ে গেছে ২৬তম নম্বরে। কোপা আমেরিকায় বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা স্টেডিয়ামে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্রটি ব্রাজিলকে কোয়ার্টারে তুললেও লাস ভেগাসে যাচ্ছে দুশ্চিন্তা নিয়ে।
বাংলাদেশ সময় রোববার সকাল ৭টায় শেষ আটে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বড় পরীক্ষা দিতে হবে এবারের কোপা আমেরিকায় ছন্দময় ফুটবল খেলা উরুগুয়ের বিপক্ষে। গ্রুপ ‘ডি’তে তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা কলম্বিয়ার শেষ আটের প্রতিপক্ষ গ্রুপ ‘সি’ রানার্সআপ পানামা। সমান ম্যাচে ব্রাজিলের পয়েন্ট ৫।
এদিন বল পজিশনে সেলেকাওদের পড়তে হয়েছে কলম্বিয়ান চ্যালেঞ্জে। ৫১ ভাগ বল দখলে রাখলেও টেকনিক্যালি খুবই দুর্বল ছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তাদের অনেকটা কোণঠাসা করে রাখা হামেস রদ্রিগেজ-কর্ডোভারা দেখিয়েছেন তাদের ফুটবলশৈলী। ১৩টি শটের মধ্যে ৭টি লক্ষ্যে রেখে কলম্বিয়ানরা প্রমাণ করেছেন, সেট পিস ও বিপজ্জনক ক্রসে তারা কতটা শক্তিশালী। প্রতিপক্ষের পোস্টে মাত্র ছয়টি শট নেওয়া ব্রাজিলিয়ানরা লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল মাত্র তিনটি।
শুধু এই পরিসংখ্যানই কলম্বিয়ার অগ্রগামিতা বোঝাচ্ছে না, মধ্য মাঠে তারা এমনভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, ব্রাজিল ফুটবলাররা শুধু বলের পেছনেই ছুটেছেন। ম্যাচটি যে হারেনি, এই ক্ষেত্রে নিজেদের কপাল ভালোই বলতে হবে সেলেকাওদের। ম্যাচের ১৯ মিনিটে রদ্রিগেজের ফ্রি কিকে নিখুঁত হেডে দাভিনসন সানচেজ বল জালে জড়ালেও ভিএআর প্রযুক্তি অফসাইড দিলে কলম্বিয়ার উদযাপন যায় থেমে। এই গোলটি বৈধ হলে তো ম্যাচটি জিতে যেত কলম্বিয়া। হয়তো জিততে পারেনি কলম্বিয়া, তবে রদ্রিগেজের নেতৃত্বে তাঁর দল ব্রাজিলের চেয়ে বেশি কার্যকর ছিল। সাও পাওলোতে খেলা রদ্রিগেজের সেট পিসগুলো অর্ধেক গোল হওয়ার মতো অবস্থায় ছিল।
পেছন থেকে ফরোয়ার্ডদের ঠিকমতো বলের জোগান দিতে পারছিলেন না ওয়েন্ডেল, গোমেস ও গুইমারেসরা। তার পরও ম্যাচের শুরুতে অসাধারণ কয়েকটি মুহূর্ত এবং রাফিনহার চোখ জুড়ানো ফ্রি কিকে এই ব্রাজিলকে দেখে মনে হয়েছিল পুরোনো সেই ছন্দটাই ফিরে আসছে। ১২ মিনিটে বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের সেট পিসটি কোনাঘেঁষে কলম্বিয়ার জালে প্রবেশ করে। প্রথম ২০ মিনিটে রাফিনহা প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন; কিন্তু তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ। সতীর্থদের কারও কাছ থেকে সেভাবে সাপোর্ট পাচ্ছিলেন না। যার দিকে বেশি দৃষ্টি ছিল, সেই ভিনিসিয়ুস প্যারাগুয়ে ম্যাচের পারফরম্যান্সটা টেনে আনতে তো পারেনইনি, উল্টো শুরুতে রদ্রিগেজকে অহেতুক ফাউল করে দেখেন হলুদ কার্ড। খেলতে পারবেন না উরুগুয়ের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি।
ব্রাজিল-কলম্বিয়া ম্যাচ মানেই শারীরিক শক্তি প্রদর্শনী এবং হাতাহাতি। ব্যতিক্রম হয়নি এদিনও। ২৭ মিনিটে রাফিনহার একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়ান দু’দলের ফুটবলাররা। হলুদ কার্ড দেখেন ব্রাজিলের গোমেস এবং কলম্বিয়ার লের্মা। ক্যালিফোর্নিয়ায় ফুটবলের চেয়ে যেন ফাউলের প্রতিযোগিতায় নামে দু’দল। পুরো ম্যাচে ৩৩টি ফাউলের মধ্যে কলম্বিয়া ১৯টি এবং ব্রাজিল করেছিল ১৪টি। কার্ডের সংখ্যায় কলম্বিয়াকে ছাপিয়ে সেলেকাওরা। পাঁচ হলুদ কার্ডের মধ্যে ব্রাজিলের তিন এবং কলম্বিয়ার দুই ফুটবলারকে কার্ড দেখান রেফারি। ঘটনাবহুল এই ম্যাচের সবকিছুই ঘটে প্রথমার্ধে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্রিস্টাল প্যালেসের রাইটব্যাক দানিয়েল মুনোজের গোলে সমতা ফেরানো কলম্বিয়া বিরতির পর পায় আরও বেশ কয়েকটি ভালো সুযোগ।
মারামারি, গোলের প্রথমার্ধের ঠিক উল্টো ছিল দ্বিতীয়ার্ধ। মন্থর ফুটবলে দু’দলই যেন ম্যাচকে ড্র হিসেবে মেনে নেয়। তবে এই অর্ধে রেফারির বেশ কিছু সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় ব্রাজিল ফুটবলারদের। বিশেষ করে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে কর্নার পেলেও খেলা শেষের বাঁশি বাজানোয় রেফারিকে ঘিরে ধরেন ব্রাজিল খেলোয়াড়রা। রেফারি হাতে থাকা ঘড়ি দেখিয়ে বলেন, সময় শেষ।