সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি, মেধা অন্বেষণ ও মডেলিংয়ের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে তরুণীদের ফাঁদে ফেলত একটি চক্র। এরপর তরুণীদের ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নিয়ে তাদের অসামাজিক কাজে বাধ্য করত। এই চক্রের মূল হোতাসহ আটজনকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার শাখা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও যশোরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ১২টি মুঠোফোন, ২০টি সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ এবং বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন চক্রের মূল হোতা মেহেদী হাসান (২৫) ও তাঁর প্রধান সহযোগী খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬) এবং মো. জাহিদ হাসান ওরফে কাঁকন (২৮), তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত (২৬), সৈয়দ হাসিবুর রহমান (২৭), শাদাত আল মুইজ (২৯), সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি (২৭) ও নায়না ইসলাম (২৪)।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অল্প বয়সী তরুণীদের কাছ থেকে কৌশলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে তাঁদের দিয়ে অসামাজিক কাজ করাতে বাধ্য করছে, এমন অভিযোগ পায় সিআইডি।
সিআইডির প্রধান বলেন, চক্রটি কাজের সুযোগ দেওয়ার নামে তরুণীদের সাক্ষাতের জন্য ডাকত। এরপর তাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে সুযোগ দেওয়ার কথা বলে আপত্তিকর ছবি নিত। প্রাথমিকভাবে কাজে আগ্রহী তরুণীদের চাহিদামতো টাকা দিত। এরপর তাদের ধীরে ধীরে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করা হতো।
চক্রের মূল হোতা মেহেদী হাসান ও তাঁর খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন দুজনই মেডিকেল শিক্ষার্থী দাবি করে মোহম্মদ আলী মিয়া বলেন, এ দুজন চক্রটি গড়ে তুলেছিলেন। সাত বছরে চক্রটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। এই টাকা দিয়ে তাঁরা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় বিপুল পরিমাণ জমিও কিনেছেন। নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়ি। চক্রের সদস্যদের আত্মীয়স্বজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য পাওয়া গেছে।
চক্রটির টেলিগ্রাম গ্রুপে হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে উল্লেখ করে সিআইডিপ্রধান বলেন, সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশ-বিদেশে চক্রটির রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। নামে–বেনামে তাঁদের শতাধিক চ্যানেলে গ্রাহকসংখ্যা কয়েক লাখ। অর্থ লেনদেনের জন্য তাঁরা ব্যবহার করতেন এমএফএস (মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস)। এ ছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাঁদের হাজার হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।