১০ বছরের ছোট্ট একটা মেয়ে, ঠিকমতো গুছিয়ে কথাও বলতে পারে না। অথচ পড়ার টেবিলটা ভরে গেছে ছয়টি আন্তর্জাতিকসহ দেশ-বিদেশের ২৬টি স্বর্ণপদকে। আছে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম, দ্বিতীয় হওয়ার আরও ছয়টি রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক। আত্মরক্ষার কঠিন কৌশল কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এসব পদক অর্জন করা মেয়েটির স্বপ্ন বিশ্ব জয়ের।
এই মেয়ের নাম মনীষা শংকর পাল। বাড়ি কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আইবিপি মাঠ সড়কে। মনীষা পড়ছে কক্সবাজার সরকারি সেন্ট্রাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে। তার বাবা উদয় শংকর পাল কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। মা জয়শ্রী নন্দী গৃহিণী। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট মনীষা।
আগামী ২৬ থেকে ২৮ জুলাই ভারতের কলকাতায় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ইন্টারন্যাশনাল কারাতে প্রতিযোগিতা ২০২৪। সেখানে বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নিচ্ছে ব্ল্যাক বেল্টধারী মনীষাও। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়বে সে।
মাত্র চার বছর বয়সে মনীষার কারাতে শেখা শুরু। প্রথম দুই বছর সে কারাতের প্রশিক্ষণ নিয়েছে বাসায়, পরের তিন বছর বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলার হলরুমে। এক বছর ধরে সে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শহরের আবু সেন্টারের ইউনাইটেড কারাতে ক্লাব বাংলাদেশে। এখানে তার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেয় দেড় শতাধিক শিশু। এর মধ্যে মেয়ে ৮০ জন। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার প্রশিক্ষণ চলে।
সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, শিশুদের কারাতে শেখাচ্ছেন উদয় শংকর পালসহ কয়েকজন প্রশিক্ষক। সেখানে মনীষাও আছে। ছয় বছরের প্রশিক্ষণে মনীষার অর্জন ঈর্ষণীয়। ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের হারিয়ে সে ছয়টি স্বর্ণপদক জিতেছে।
মনীষার বাবা উদয় শংকর পালই তার প্রশিক্ষক। তিনি বলেন, অন্য ছেলেমেয়েদের কারাতে শিখতে দেখে মনীষারও ইচ্ছা জাগে শেখার। মেয়ের এমন আবদারে তিনি না করেননি। কারাতে প্রশিক্ষণে ২৬টি কাতা (শেডো ফাইট বা ধাপ) থাকে। মাত্র দুই বছরের মাথায় মনীষা রপ্ত করে নেয় ১৬টি কাতা, যা ১৬-১৭ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের পক্ষেও অনেক সময় সম্ভব হয় না। ব্ল্যাক বেল্টের জন্য ১০টি ডান থাকে। মনীষা ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ডান সম্পন্ন করেছে।
মনীষা ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কারাতে প্রতিযোগিতা ২০২০’-এ একক কারাতে (কাতা মহিলা) বিভাগে অংশ নেয়। নয়জন প্রতিযোগী ছিল। তখন মনীষার বয়স ৬ বছর। অন্য প্রতিযোগীদের বয়স ছিল ১৬ থেকে ১৭ বছর। সেবার সে ষষ্ঠ হয়। ওই বছরই সে চট্টগ্রামে ‘শাহজাদা চ্যালেঞ্জ কাপ ২০২০’-এ দুটি বিভাগে (জুনিয়র গার্লস কাতা ও কুমি) অংশ নেয়। উভয় বিভাগে প্রতিযোগী ছিল ১৫ জন করে। সবাইকে পেছনে ফেলে দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয় মনীষা। এরপর শুধু তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প। সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত বিচ ফ্রেন্ডশিপ কারাতে প্রতিযোগিতা ২০২৪-এ মেয়ের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয় সে।
মনীষার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এত মেডেল দিয়ে সে কী করবে। জবাব সে বলে, ‘অনেক কিছু হবে। গোল্ড মেডেল দেখে ছেলেমেয়েরা কারাতে শিখতে উৎসাহ পাবে। তারাও এমন মেডেল পাবে।’ মেয়ের স্বপ্নপূরণে বাবা পাশে থাকবেন, সবকিছু করবেন, এমনটাই অঙ্গীকার করলেন।