ইতালিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া তিন দিনের জি-৭ সম্মেলনে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ব্যবহারের পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণাও আসতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি এ কথা বলেন।
ইতালিতে আগামীকাল শুরু হবে পশ্চিমা সাত শক্তির রাজনৈতিক জোট জি-৭-এর ৫০তম সম্মেলন। এতে জি-৭-এর নেতারা রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থগিত করে রাখা ৩২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদের সুদ থেকে কিয়েভকে সাহায্য করার জন্য একটি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার আশা করছেন। তাঁদের প্রস্তাব হচ্ছে, ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত ঋণের জন্য জামানত রাশিয়ার সম্পদ থেকে আসা লাভ ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এ ঋণ কে দেবে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু কারিগরি বিষয়ও যুক্ত রয়েছে। যদি কখনো শান্তি প্রক্রিয়ার ফলে ওই সম্পদ মুক্ত করে দিতে হয়, তখন কী পরিস্থিতি হবে, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
জন কারবি অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বলেছেন, জি-৭ সম্মেলনে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের প্রভাবশালী পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে।
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমিতে এবারের জি-৭ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউরোপের টালমাটাল রাজনীতি ও ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের আসন্ন নির্বাচনের মুখে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এবারের সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য সমর্থন বাড়ানোর বিষয়টি এজেন্ডার শীর্ষে রয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে আরও সহযোগিতা চাইবেন। এর বাইরে ফিলিস্তিন ইস্যু ও আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
জি-৭ সম্মেলন
জি-৭-এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো গ্রুপ অব সেভেন বা সাতটি দেশের দল। বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির সাতটি বড় দেশ ও একটি সংস্থা নিয়ে এই জোট গঠিত। জোটের সদস্যদেশ হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই জোটের একটি অংশ। রাশিয়া ১৯৯৭ সালে এই জোটে যোগ দিলে সেটা জি-৮ হয়েছিল। তবে ক্রিমিয়া দখল করার কারণে ২০১৪ সালে রাশিয়া বাদ পড়ে যায়। এরপর রাশিয়া আর জি-৭-এ যোগ দেয়নি। চীন একটি বড় অর্থনীতি এবং বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা এই জোটের সদস্য নয়। কোনো দেশে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকলে ওই দেশকে জি-৭-ভুক্ত দেশগুলোর মতো উন্নত অর্থনীতি হিসেবে দেখা হয় না। তবে চীন ও রাশিয়া জি-২০-এর সদস্য।
এবারে জি-৭-এর ৫০তম সম্মেলনে সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা ছাড়াও আফ্রিকা ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য হাজির হবেন।
এ সম্মেলনে নিজ দেশের সমস্যার বাইরেও রাষ্ট্রপ্রধানরা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে আলোচনার সুযোগ পাবেন। প্রতিবছর জি-৭-এর একটি সদস্যদেশ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক এবং বছরব্যাপী সভাপতিত্বের জন্য দায়িত্ব নেয়। গত বছর ৪৯তম সম্মেলনের আয়োজক ছিল জাপান। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক ফোরাম আয়োজন।
জি-৭-এর একটি জোট হলেও তারা কোনো আইন পাস করতে পারে না। কারণ, প্রতিটি দেশেই নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে অতীতে এই জোটের অনেক সিদ্ধান্তের বৈশ্বিক প্রভাব দেখা গেছে। এর আগে ২০০২ সালে এইডস ও ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল জি-৭। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের জি-৭ সম্মেলন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য বেশি করের বিষয়ে মন্ত্রীরা একমত হন।
এবারের সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল। এর বাইরে উপস্থিত থাকবেন পোপ ফ্রান্সিস, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।