সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের পুকুর থেকে গভীর রাতে চুরি করা প্রায় ৬০০ কেজি মাছ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শনিবার (৮ জুন) ভোর ৫টার দিকে চুরির সময় গোপন সংবাদ পেয়ে দুদকের গোপালগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয় অভিযানে ওই মাছ জব্দ করে। দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করে।
গোপালগঞ্জ জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিল্লুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই রিসোর্ট থেকে মাছ ধরে বিক্রি করার সময় মাছ জব্দ করা হয়। পরে তা নিলামে বিক্রি করা হয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানায় হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সোহরাব হোসেন সোহেল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। সাভানা ইকোর পুকুর থেকে ধরা ৫৫৫ কেজি তেলাপিয়া মাছ ও সাড়ে ৩৭ কেজি কাতলা মাছ জব্দ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ক্রোক ও ফ্রিজকৃত সম্পদের রিসিভার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকাবস্থায় ক্রোককৃত সম্পত্তির মধ্যে রিসোর্টের অভ্যন্তরে পুকুরের মাছসহ বিভিন্ন সম্পদ চুরি করছেন মর্মে গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায়। বিষয়টি দুদককে অবহিত হলে গোপালগঞ্জের দুদকের একটি টিম রিসোর্টে সরেজমিন তদন্তে গেলে ২০ একরের পুকুরে মাছ ধরা দেখতে পায়।
গোপালগঞ্জ দুদক অফিস সূত্রে জানা যায়, দুদক টিম আসার খবর পেয়ে আসামিসহ সংশ্লিষ্টরা পালিয়ে যায়। মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেদের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, উক্ত রিসোর্টের মৎস্য হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামের নির্দেশে তারা মাছ ধরছেন। মাছ পচনশীল বিধায় সেখানে উপস্থিত গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে জব্দ মাছ উপস্থিত মৎস্যজীবীদের মধ্যে নিলামে বিক্রি করে ৮৩ হাজার ৭৫৪ টাকা সরকারি খাতে জমা দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে গোপালগঞ্জ সদর থানায় সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রা. লিমিটেডের মৎস্য হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পার্কের যাবতীয় মালামালের ইনভেন্টরী প্রস্তুতের কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানা যায়।
গত ২৩ মে আদালতের আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। অন্যদিকে গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।