বান্দরবানে দুদকের কর্মকর্তারা আসার খবর পেয়ে খামার থেকে ৩৬টি গরু সরিয়ে নিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের খামার বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মংওয়েচিং মারমা। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
বুধবার (৫ জুন) রাতে বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝের পাড়ার বেনজীরের খামারবাড়ি থেকে এসব গরু সরিয়ে নেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, বেনজীরের খামারে গরু ছিল ৩৭টি। দুটি ট্রাকে করে সেখান থেকে ৩৬টি গরু নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়। তাদের দাবি, দুদক বান্দরবানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি নিয়ে প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই খামারবাড়ির দায়িত্বে থাকা মংওয়েচিং মারমা গরুগুলো সেখান থেকে সরিয়ে নেন।
এ বিষয়ে মংওয়েচিং মারমা জানান, তিনি নিজেই গরুর খামারটির মালিক। এ জন্য গরুগুলো তিনি সেখান থেকে নিয়ে গেছেন।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, দুদক থেকে চিঠি দেওয়ার পর বান্দরবানে থাকা বেনজীরের সম্পত্তির হিসাব ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সম্পত্তির আরও খোঁজ পাওয়া গেলে সেটিও জানানো হবে।
গত ২৩ মে বেনজীর আহমেদের সম্পত্তির ৮৩টি দলিল জব্দের ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। এরপর ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ১১৯টি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক, রাজধানীর গুলশানের আলিশান চারটি ফ্ল্যাট, শতভাগ এবং আংশিক মালিকানাধীন ২৩ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশও দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, বেনজীরের বিশাল বিত্তবৈভব নিয়ে গত ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে সাবেক এই আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি রিসোর্ট গড়ে তুলেছে বেনজীর পরিবার। এ ছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ছয়টি কোম্পানি। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পরবর্তীতে অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ১৯৬টি দলিলে থাকা ৬২৭ বিঘা জমি (২০ হাজার ৭০৩ শতক), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগের সন্ধান পায় দুদক। এরপর সংস্থাটির আবেদনের প্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।
আদালতের নথি থেকে জানা যায়, বেনজীরের সম্পত্তির একটি বড় অংশ রয়েছে তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের তিন উপজেলায়। গোপালগঞ্জ সদরে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬৫টি দলিলে ২৪০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। টুঙ্গিপাড়ায় তিনটি দলিলে ৪৭ শতাংশ, কোটালীপাড়ায় ৩৫ বিঘা জমি কিনেছেন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুরের রাজৈরে ২০২১ ও ২০২২ সালে তার স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে প্রায় ২৮০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে।
বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি এলিট ফোর্স র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাড়ে চার বছর র্যাবের নেতৃত্ব দেওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।