এবার সিলেট নগরের ১৫টি এলাকা প্লাবিত

0
75
সিলেটে পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বেড়েছে। নদী লাগোয়া কিছু বসতবাড়ি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শুক্রবার সকাল আটটার দিকে নগরের শাহজালাল ব্রিজ সংলগ্ন কমদমতলী এলাকায়

বন্যার পানি এবার সিলেট নগরেও ঢুকে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে আজ শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নগরের ১৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

আজ বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের তেরোরতন, সাদারপাড়, সোবহানীঘাট, কুশিঘাট, উপশহর, তালতলা ও জামতলা এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে তেরোরতন, উপশহর ও সোবহানীঘাট এলাকার রাস্তা তলিয়ে গেছে। তালতলা এলাকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনেও পানি ঢুকেছে। বাসায় পানি ঢুকে পড়ায় অনেকের আসবাব ভেসে গেছে। পানি ক্রমাগত বাড়ায় অনেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।

তেরোরতন এলাকার বন্যাকবলিত রেহানা আক্তার (৪২) জানান, তাঁর বাসায় এখন হাঁটুসমান পানি। রান্নাঘর ডুবে যাওয়ায় রান্নাবান্নাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। উপশহর এলাকার বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন (৩৭) বলেন, সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। পানিতে আশপাশের ময়লা-আবর্জনা ভাসছে। পানি মাড়ানোয় পা চুলকাচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে থাকায় প্যানেল মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরান এখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরের বন্যাকবলিত ১৫, ২২ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, কাউন্সিলর শাহানা বেগম, ফজলে রাব্বি চৌধুরী ও হুমায়ূন কবির; সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর প্রমুখ।

সিলেট নগরের চাঁদনীঘাট এলাকায় বসবঘরে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। শুক্রবার সকালে
সিলেট নগরের চাঁদনীঘাট এলাকায় বসবঘরে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। শুক্রবার সকালে

এ সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ইতিমধ্যে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি এখন শহরের দিকেও আসছে। তবে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে সংকট মোকাবিলা করতে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, সুরমা নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী বিভিন্ন ছড়া ও খাল দিয়ে পানি ঢুকে নগরের অন্তত ২০ হাজার মানুষ গতকাল পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দী।

জনসংযোগ কর্মকর্তা আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিশোরীমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের পাশের একটি পাঁচতলা ভবনে ৪০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। অন্যান্য ওয়ার্ডেও আশ্রয়কেন্দ্র চালুর প্রস্তুতি চলছে। আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে।

এর আগে তিন দিন ধরে ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। পাশাপাশি সিলেটে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে। এতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা। মূলত জেলার প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি উপচে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ডুবে গেছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অসংখ্য বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকেছে। তবে শুক্রবার কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কিছু এলাকায় অবনতি হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.