সড়ক সংস্কারের নামে ১৫ গাছ কর্তন, স্থানীয়দের ক্ষোভ

0
84
সড়ক সংস্কারের নামে ১৫ গাছ কর্তন করার ছবি

তীব্র তাপদাহে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। তাপদাহ থেকে মুক্তি পেতে সরকার এবং পরিবেশবিদরা যখন গাছ লাগানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ৬০নং লতাচাপলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫টি বিশালাকৃতির গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এসব গাছ কাটার ক্ষেত্রে সরকারি কোনো বিধি বিধান মানা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

কুয়াকাটা পৌরসভার সড়ক সংস্কারের নামে গত শনিবার ও রোববার এসব গাছ কর্তন করে সমিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্কুলের ছায়া বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত এসব গাছ কেটে ফেলায় সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

কর্তন করা এসব গাছের মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন স্কুলের অভিভাবক এবং প্রাক্তন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। কেটে ফেলা এসব গাছ নাম মাত্র মূল্যে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

কেটে ফেলা এসব গাছের দায় নিতে রাজি নয় স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পৌরসভা। গাছ কাটা নিয়ে পৌরসভা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব গাছ সড়ক সংস্কার কাজের জন্য পৌর মেয়র কেটেছেন। অন্যদিকে পৌর মেয়র বলছেন, গাছগুলোকে স্কুল কর্তৃপক্ষ কেটেছে। গাছের মালিকানা নিয়েও রয়েছে ধূম্রজাল।

স্কুলের গাছ কাটার বিষয়টি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম জানার পর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে তলব করে কারণ দর্শানোর জন্য বলেছেন। পাশাপাশি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

৬০নং লতাচাপলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, আমি সভাপতি থাকাকালীন ওই গাছ কাটার জন্য বলা হয়েছিল। তখন আমি গাছ কাটতে রাজি হইনি।

তিনি বলেন, স্কুলের গাছ স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কারও কাটার ক্ষমতা নেই। তবে আমি শুনেছি সড়ক সংস্কারের জন্য মেয়র গাছ কেটেছেন।

ওই স্কুলের সাবেক সভাপতি, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনন্ত মুখার্জী জানান, তিনি স্কুলের সভাপতি থাকাকালীন স্কুলের সবুজ পরিবেশ বজায় ছিল। স্কুলের শিক্ষার্থীরা গাছের ছায়ায় খেলাধুলা করতো। স্কুলের সবুজ ছায়াবিথির জন্য বরিশাল বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন সেই বিশালাকৃতির ১৫টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। একেকটি গাছের মূল্য ২০-২৫ হাজার টাকা হবে বলে দাবি তার।
অনন্ত মুখার্জী আরও জানান, এসব গাছ প্রধান শিক্ষক নিজেই কর্তন করেছেন। এর আগেও ৬-৭টি বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সেসব গাছ কি করা হয়েছে তার কোনো হদিস নেই। প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের গাছ কেটে নিয়ে গেছে বলে দাবি তার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কলাপাড়া উপজেলা শাখার সদস্য সচিব সাংবাদিক মেসবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, সড়ক সংস্কার কিংবা রাষ্ট্রের স্বার্থে গাছ কাটার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বিধি বিধান মেনে গাছ কাটতে হবে। এসব গাছ কাটতে কোন প্রকার বিধিবিধান মানা হয়নি। উল্টো স্কুলের প্রধান শিক্ষক দায় এড়াতে এসব গাছ তাদের নয় বলে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন, যা মোটেই কাম্য নয়।

স্কুলের বর্তমান সভাপতি কাউন্সিলর শহিদ দেওয়ান বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয় আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। সড়ক সংস্কারের জন্য হয়তো পৌর কর্তৃপক্ষ কেটেছে।

এ বিষয়টি জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, ওই গাছ স্কুলের বাউন্ডারি ওয়ালের বাহিরে। স্কুলের গাছ নয়। সড়ক সংস্কারের জন্য পৌর মেয়র এসব গাছ কেটেছেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।

এসব গাছ প্রায় ২০ বছর পূর্বে তৎকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষ লাগিয়েছে তাহলে এ গাছ স্কুলের নয় কেন- এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক জানান, তিনি এই স্কুলে যোগদান করার পর দেখেছেন এসব গাছ বাউন্ডারি ওয়ালের বাহিরে। এর বেশি কিছু তার জানা নেই।

কলাপাড়া উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার অচ্যুতা নন্দ দাস বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছেন ওই গাছ স্কুলের বাউন্ডারির বাহিরে। এগুলো পৌরসভার গাছ, স্কুলের গাছ নয়। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, গাছগুলো বেশি মোটা হয়ে গেছে। যার জন্য বাউন্ডারি ওয়াল ফেটে ভেঙে গেছে। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ গাছগুলো নিজেরাই কেটে ফেলেছে। তিনি বা পৌরসভার কেউ ওই গাছ কাটেনি।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, গাছ কাটার কথা শুনে প্রধান শিক্ষককে ডেকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.