তীব্র গরমে চলছে ক্লাস, অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা

0
88

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই আজ থেকে শ্রেণি কক্ষে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথারীতি ক্লাস চলছে। যদিও চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খুলে দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। তারা বলছেন, শিশুদের কথা বিবেচনা করে সরকার আরও অন্তত এক সপ্তাহ পরে স্কুল খুলতে পারতো।

রোববার (২৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের গেইটে দেখা যায়, অভিভাবকরা তাদের সন্তান পৌঁছে দিচ্ছেন; সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছেন পানি ও জুস। একইসঙ্গে গরমে সুস্থ থাকতে দিয়েছেন নানা উপদেশ। আবার তাপপ্রবাহে ক্লাসের বাইরে বের না হতে, মাঠে খেলাধুলা না করতে এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি না করার জন্যও সতর্ক করেছেন তারা।

তীব্র গরমের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে ছিলেন না অনেক অভিভাবক। তাদের শঙ্কা, বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে গরমের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। আর শিক্ষকরা বলছেন, গরমে শিশুদের অস্থিরতা ধরা পড়ছে ক্লাস রুমে। অনেকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

দনিয়া এ একে স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাউনিতে সন্তানের ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় অভিভাবক আকলিমা বেগম বলেন, এই গরমের মধ্যে স্কুল খোলাটা ঠিক হয়নি। কারণ পড়াশোনার চেয়ে জীবনটা আগে। হয়ত সপ্তাহখানেক পরে বা ১০ দিন পরে তাপমাত্রা কমে যেত, যদিও আবহাওয়া অফিস কি সবসময় ঠিক কথা বলে। একটু অপেক্ষা করলে কি আর এমন হতো। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা সমর্থন করছি না। যেখানে একটা নিয়মের মধ্যে আছি, সেখানে তো জলে বসবাস করে কুমিরের সঙ্গে মারামারি চলে না।

মালয়েশিয়ায় ১৩২ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

 

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম। সকাল ৭টায় তার ক্লাস শুরু হয়ে ৯টা ৪০ মিনিটে ছুটি হয়েছে। ছুটি শেষে এই কোমলমতি শিক্ষার্থী বমি করে এবং কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে তাকে স্কুলে নিয়ে আসা অভিভাবক মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

শুধু উম্মে কুলসুম নয়, এ স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তারা ক্লাস না করেই বাসায় ফিরে গেছে। যাতায়াতের সময়ই তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে বলে জানান অভিভাবকরা। ক্লাস করতেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। অভিভাবকদের দাবি, গরমের এই তীব্রতার মধ্যে স্কুল বন্ধ কিংবা অনলাইনে ক্লাস নিলে সেটি ভালো হয়।

আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী অনামিকা। তার বাবা মহসিন বলেন, এই গরমে বড়রা টিকতে পারে না। সেখানে বাচ্চারা কীভাবে ক্লাস করে ভাবতে কষ্ট লাগে।

মালয়েশিয়ায় ১৩২ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

শামসুন্নাহার নামের আরেকজন অভিভাবক বলেন, শনিবারের ছুটিটা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। একই সরকার দুই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিকের স্কুল শনিবারে বন্ধ থাকবে আর আমাদের মাধ্যমিক স্কুলগুলো শনিবার খুলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এখন যে কারিকুলামটা দিয়েছে এটা কিন্তু আমরা বেশিরভাগ গার্ডিয়ানরাই বুঝতে পারি না। আমাদেরকে বাইরের দেশের উদাহরণ দেওয়া হয় ভালো কথা। তাহলে ওরা আগে বাইরের দেশের মতো অবকাঠামো তৈরি করত। তারপর নতুন কারিকুলামটা নিয়ে আসতো। তাহলে পুরো দায়িত্বটা স্কুল নিতো। আমরা সকালে এসে বাচ্চাকে দিয়ে যেতাম এবং বিকেলে এসে নিয়ে যেতাম। আমাদেরকে এই মাঝামাঝি সময় এখানে বসে থাকতে হতো না।

ভিকারুননিসা ন্যূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র পাল বলেন, আজই প্রথম স্কুল খুলেছে, ক্লাস হচ্ছে। আমাদের শাখায় সব ক্লাসে উপস্থিতি স্বাভাবিক। অতিরিক্ত গরমে শিশুরা হাফিয়ে উঠছে এটা সত্য। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা আমাদের স্কুলে নেই।

৩১ মার্চ থেকে দেশে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত ২৮ দিন ধরে টানা তাপপ্রবাহ চলছে; যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে ঈদের ছুটির পর আর স্কুল খোলেনি সরকার। অসহনীয় গরমের কারণে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

এই গরমে শিশুদের ‘অতি উচ্চ ঝুঁকির’ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফও।

তবে সাত দিন ক্লাস বন্ধ রাখার পর ছুটি আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে কারণে রোববার থেকেই ক্লাসে ফিরতে হল শিশুদের।

এদিকে তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ বন্ধের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আজ (রোববার) বলেছেন, কোথাও বেশি গরম আছে মানেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে; এটার কোনো মানে নেই। কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে গেলে সংশ্লিষ্ট এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তবে এই মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের।

এ ছাড়া চলমান তাপদাহের মধ্যে স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হলে তার দায় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে বলে জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.