রপ্তানি ধরে রাখতে সতর্ক হতে হবে বাংলাদেশকে

0
83

পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টে পাস হওয়া নতুন আইন নিয়ে উদ্বেগের কিছু দেখছেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তারা। তবে ইইউর ২৭ দেশে রপ্তানি অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে বাংলাদেশকে আরও বেশি সতর্ক হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন তারা।

ইইউর বাজারে ব্যবহৃত সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন, বিপণনসহ সরবরাহ চেইনের সব পর্যায়ের জন্য করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডাইরেক্টিভ (সিএসডিডিডি) পাস হয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। গত বুধবার এই আইন পাস হয়েছে। ইইউ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য। দেশের মোট রপ্তানির ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ যায় ইউইর দেশগুলোতে। সিএসডিডিডি অনুসারে, কোনো শিল্প-কারখানায় মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হলে যেসব ব্র্যান্ড সে কারখানায় কার্যাদেশ দেয়, তাদেরও দায়ী করা হবে।

ইইউসহ বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও মানবাধিকার সুরক্ষার উদ্দেশে আইনটি হয়েছে। তবে এখনই এটি কার্যকর হচ্ছে না। নতুন আইনটি ইউউর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে কার্যকর হতে আরও দুই বছর সময় লেগে যেতে পারে। এই আইনে বলা হয়েছে, দেশে-বিদেশে ইইউর যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করবে এবং বার্ষিক বিক্রি ন্যূনতম ৪৫ কোটি ইউরো ও কর্মীর সংখ্যা এক হাজারের ওপরে, তাদের ওপরই আইনটি কার্যকর হবে। আইন পরিপালনে ব্যর্থতায় জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তারা বলছেন, সতর্ক থেকে বেশ কিছু বিষয় নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশকে। মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, সুশাসন ও পরিবেশ সুরক্ষাবিষয়ক চারটি মূল নীতিসহ জাতিসংঘের ৩২টি কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করতে হবে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সব মূল কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করেছে। তবে বাংলাদেশ এখনও কার্বন দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ রপ্তানিকারক কারখানা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে হবে। আরও বেশি নজর দিতে হবে শ্রম অধিকার নিশ্চিতে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সহসভাপতি শামীম ফজলে এহসান বলেন, ইইউর নতুন আইনের কারণে বাংলাদেশ খুব বেশি সমস্যায় পড়বে না। কারণ পরিবেশের বিবেচানায় বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। সবুজ কারখানার সংখ্যা সারাবিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই বেশি আছে। মানবাধিকার ও শ্রমিকের অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চীন ও ভিয়েতনামের তুলনায় ভালো অবস্থানে থাকায় খুব বেশি চ্যালেঞ্জ হবে না। এরকম একটি আইনের কথা বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। ফলে উদ্যোক্তাদের কিছু প্রস্তুতিও আছে এ বিষয়ে।

সিএসডিডিডি আইন অনুসারে, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করে, তাদের জন্যও নতুন বাধ্যবাধকতা আরোপ হবে। এর ফলে কোম্পানিগুলোকে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিবেশের ক্ষতি রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দাসত্ব, শিশুশ্রম, শ্রম শোষণ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, দূষণ এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ক্ষতি রোধেও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে এতে।

এতে বলা হয়, যেসব কোম্পানি আইনের বিধান লঙ্ঘন করবে, তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশের পাশাপাশি ওই কোম্পানির মোট লেনদেনের ৫ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হবে। এ বিষয়গুলোতে সহযোগিতা ও সর্বোত্তম চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ইউরোপীয় কমিশন একটি কর্তৃপক্ষও গঠন করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.