যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ মিথ্যা: হামাস

0
71

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ছিল- হামাস যুদ্ধবিরতির ‘গোলপোস্ট সরিয়েছে’ এবং গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আলোচনায় তাদের দাবিগুলো পরিবর্তন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এসব অভিযোগকে ‘কিক’ মেরে উড়িয়ে দিয়েছে হামাস।

তবে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথু মিলার দাবি করেছেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী একটি ‘আঞ্চলিক যুদ্ধ’ উস্কে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির চুক্তির শর্তগুলো পরিবর্তন করেছে।

মিলার আরও বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে হামাসের দাবি পূরণের জন্য ইসরায়েল কিছুটা পথ এগুলে হামাস আবার তাদের দাবি পরিবর্তন করেছে।’

‘এর দ্বারা মনে হচ্ছে হামাস একটি পূর্ণ আঞ্চলিক যুদ্ধের জন্য আগ্রহী। বরং তারা সংকল্প করে বসেছে, যে কারণে আলোচনার টেবিলে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে তারা সম্মত হয়নি।’, বলেন মিলার

তবে হামাস কীভাবে তাদের আলোচনার অবস্থান পরিবর্তন করেছে সে বিষয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কিছুই জানায়নি।

এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হামাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এসব বিবৃতি ‘বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই’ এবং আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ওয়াশিংটন সম্পূর্ণরূপে দায়ী।

স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি আরও জানিয়েছে, তাদের দাবিগুলো প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকার যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে বাধা দিচ্ছে।

বিবৃতিতে হামাস দাবি করেছে, ‘মার্চে উপস্থাপিত দাবিগুলোর মতোই তাদের দাবিগুলো স্পষ্ট। এছাড়া তারা যুদ্ধবিরতের লক্ষ্যে সকল পক্ষ এবং মধ্যস্থতাকারীদের স্বাগত জানায়।’

হামাস বলেছে, ‘তারা এমন চুক্তিতে আগ্রহী যা তাদের ‘জনগণের উপর আগ্রাসন বন্ধ করবে’ এবং এই প্রস্তাব তাদের দাবি পূরণ করেনি।’

হামাস তাদের প্রাথমিক যে দাবি দাওয়াতেই অনড় রয়েছে, অন্তত প্রকাশ্যে তারা তাই জানিয়েছে। এই দাবি দাওয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং কোনও বাধা ছাড়াই বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তরাঞ্চলে ফিরিয়ে আনা।

আর অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস ধ্বংস এবং তাদের (হামাসের) হেফাজতে থেকে জিম্মি মুক্ত না করা পর্যন্ত ইসরায়েল লড়াই চালিয়ে যাবে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কখনো সহজ কাজ নয়। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর কোনও সমঝোতায় পৌঁছানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের তরফে কায়রোতে সর্বশেষ দফার আলোচনায় সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নসকে পাঠানোর মতো পদক্ষেপই সম্ভবত এর সবচাইতে বড় ইঙ্গিত।

২০১১ সালে ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতের মুক্তির জন্য হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় সহায়তা করেছিলেন গেরশন বাসকিন। তিনি বলেছেন, ‘হামাসকে চাপে রাখার জন্য ইসরায়েল, মিশর ও কাতারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ খুব বেশি এবং এটা বেশ স্পষ্ট। এই যে সিআইএর প্রধান উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে। এই আলোচনার জন্য শীর্ষস্তরের মধ্যস্থতাকারীদের থাকাটা প্রয়োজন ছিল। এটাই কিন্তু আমেরিকার তরফ থেকে বাড়তে থাকা চাপের ইঙ্গিত দেয়।’

তার মানে কিন্তু এটা নয় যে চুক্তির বিষয়টা এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রস্তাব অনুযায়ী, ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক পর্যায়ে হামাস ৪০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে। মুক্তির ক্ষেত্রে নারী বন্দি, ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং গুরুতর অসুস্থ ও সেনাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল মুক্তি দেবে কমপক্ষে ৭০০ ফিলিস্তিনিকে। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন ইসরায়েলিদের হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন, যা অতীতে ইসরায়েলে বিতর্কিত বলে প্রমাণিত হয়েছিল।

তবে হামাস মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে যে ৪০ জন জিম্মির কথা বলা হয়েছে তারা তাদের কাছে নেই। হামাসের এই দাবি একাধিক আশঙ্কাকে উস্কে দিয়েছে।

যত সংখ্যক জিম্মি মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে প্রকৃত সংখ্যা তার চাইতে অনেক বেশি হতে পারে। জিম্মিরা ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের মতো অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে এমন সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে তুলেছে হামাসের এই দাবি।

এদিকে ইসরায়েলে সামাজিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন অংশের চাপের কারণে নেতানিয়াহুর কৌশলের জায়গা সীমিত হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলের বেশিরভাগ মানুষ যুদ্ধের সমর্থন করলেও জিম্মিদের মুক্তির জন্য চুক্তিতে সম্মত হতে ক্রমাগত বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বন্দিদের ফেরানোর অগ্রাধিকার না দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন- এই অভিযোগ জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ব্যাপক বিক্ষোভও দেখিয়েছে। একইসঙ্গে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিও জোরালো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত এবং ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি নেওয়া হয়েছিল। তার উত্তরে ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণ চালায়।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর ফলে ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলটির বিরাট অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং বহু ফিলিস্তিনি খাবারের দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.