গাঁজার নির্যাস দিয়ে তৈরি ব্যয়বহুল মাদক কুশের তেমন চাহিদা নেই দেশে। তার পরও গত এক মাসে ধরা পড়েছে এর তিনটি চালান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক চোরাচালানের খুব কম অংশই জব্দ করা সম্ভব হয়।
বাকিটা আইন প্রয়োগকারীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কারবারিদের হাতে পৌঁছে। এ থেকে ধারণা, বহুমূল্য এ মাদকের ছোট ছোট চালান এনে একত্রিত করে তা অন্য দেশে পাঠানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশ।
কুশসহ গাঁজার কেক ও চকলেটের কারবারে জড়িত তিন তরুণকে গ্রেপ্তারের পর চক্রের আরও দু’জনকে শনাক্ত করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকা ওই দু’জনকে যে কোনো সময় গ্রেপ্তারের আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর পেছনে বড় কেউ আছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সেই ‘হোতা’ পোশাক ব্যবসায় যুক্ত বলে জানা গেছে। অন্যান্য পণ্য রপ্তানির আড়ালে কুশ পাচার করা হয়ে থাকে।
ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, কুশের কারবারে জড়িত চক্রের অপর সদস্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে কিছু তথ্য মিলেছে। তার ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
গত ২১ এপ্রিল ডাক বিভাগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসা পার্সেলের ভেতর কুশসহ গাঁজা থেকে তৈরি কোটি টাকার মাদকের চালান পায় ডিএনসি। এর সূত্র ধরে পরদিন আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো– একটি পোশাক কারখানার বিপণন কর্মকর্তা ইমরান ওরফে রাজ, তার বন্ধু পোশাক কারখানার অপারেটর রমজান মিয়া ও রাসেল মিয়া।
ডিএনসি কর্মকর্তারা জানান, চালানটি ধরার আগে এ মাসেই প্রায় ৫০০ গ্রাম কুশের আরেকটি চালান জব্দ করে ডিএনসির গোয়েন্দা শাখা। তবে ওই চালানের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি। এর পর ধরা পড়ে কোটি টাকার কুশের চালান। পরে ওটসের কৌটায় আসা ৫০০ গ্রাম ওজনের আরেকটি চালান জব্দ করা হয়। এ তিন চালানই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডাকে এসেছিল।
কর্মকর্তাদের ধারণা, একই চক্র এসব মাদক এনেছে। এখন পর্যন্ত চক্রের যেসব সদস্যকে গ্রেপ্তার বা শনাক্ত করা হয়েছে, তারা এ কারবারের মাঠপর্যায়ের লোক। মূল হোতাসহ তার সহযোগীরা আড়ালে থেকে তাদের দিয়ে লেনদেন করাচ্ছে। প্রতি কেজি কুশ আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়। এত দামি মাদক নেওয়ার লোক এ দেশে কমই আছে। সে কারণেই এগুলো ভারত হয়ে অন্যান্য দেশে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে গুলশান-বনানী-উত্তরার অভিজাত মহলে কুশের কিছু ব্যবহার থাকতে পারে। এ জন্য এখন ওই পর্যায়ে নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ বাড়ানো হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত গাঁজার চেয়ে শতগুণ বেশি শক্তিশালী মাদক কুশ। দেশে এ মাদক বিশেষ পরিচিত নয়; ধরাও পড়েনি তেমন। প্রায় দুই বছর আগে ২০২২ সালের আগস্টে ঢাকায় কুশসহ নতুন ধরনের মাদক জব্দ করা হয়েছিল। তার পর হঠাৎ করেই এক মাসে তিনটি চালান পাওয়া গেল। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কুশ ‘ক’ শ্রেণির মাদক। কারও কাছে এর ২৫ গ্রাম পাওয়া গেলে তার সাজা মৃত্যুদণ্ড, নয়তো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর এ মাসের তিন অভিযানেই দুই কেজির বেশি কুশ পাওয়া গেছে।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসা মাদক জব্দের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনসির পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, দেশে অপ্রচলিত এ মাদক কারবারের নেপথ্যে কারা জড়িত তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। চক্রের হোতাসহ সব সদস্যকে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ চলছে।