সীমা লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তির মুখে ৩৩ ব্যাংক ও ৬ প্রতিষ্ঠান

0
99
বাংলাদেশ ব্যাংক

তারল্য সংকটের ধকল সামলাতে নিজেদের মধ্যে কল মানিতে (ওভারনাইট) ধারদেনা করছে তফসিলি ব্যাংক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই)। আর এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ ব্যাংকই মানছে না বেঁধে দেওয়া ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ হারের সীমা। এই সীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত সুদে ৫ হাজার ৮১১ কোটি টাকা লেনদেন করেছে ৩৩টি ব্যাংক এবং ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কল মানিতে সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা লঙ্ঘনের দায়ে এই ৩৯ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ব্যাপারে সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে জরিমানার মুখে পড়তে হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি বাতিল হতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য সুবিধাও।

তবে শাস্তি নির্ধারণের আগে যথাযথভাবে তদন্ত করা হবে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, যাদের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের দায় প্রমাণিত হবে, তারাই আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩টি ব্যাংক বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ৯ টাকা ৫০ পয়সা সুদের সীমা লঙ্ঘন করে ৩ হাজার ১০৫ কোটি ধার করেছে এবং একই সময়ে ২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে অন্য ব্যাংককে। একইভাবে ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ সুদের সীমা ভেঙে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ হারে ৯৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ধার করেছে। এ ধরনের লেনদেনকে ব্যাংকিং নীতিমালার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংক ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে কল মার্কেটে ৪৮১ কোটি টাকা ধার করেছে অন্য ব্যাংক থেকে। একই রেটে ৯৫ কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ সুদে ধার দিয়েছে ৪৫৯ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ সুদে ৩০৪ কোটি টাকা, ব্যাংক অব শিলং ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ১১৬ কোটি টাকা এবং ব্যাংক আল ফালাহ ১৭৬ কোটি টাকা ধার দিয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ৩০০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে সিটি ব্যাংক। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ সুদে ২০৯ কোটি এবং সিটিজেন ব্যাংক ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ১৮ কোটি টাকা অন্য ব্যাংকে ধার দিয়েছে। ইউসিবি ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ধার করেছে ২৯৭ কোটি টাকা এবং একই সময়ে ব্যাংকটি ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ সুদে অন্য ব্যাংকে ধার দিয়েছে ২৮০ কোটি টাকা।

নির্ধারিত সুদের চেয়ে বেশিতে ঋণ নেওয়া ব্যাংকগুলোর তালিকায় নাম আছে ইস্টার্ন ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর।

এছাড়া অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিএলসি, ডিবিএইচ, পিএফআইএন, বে লিসিং, বিডি ফাইন্যান্স ও আইসিবি নিয়ম লঙ্ঘন করে কল মার্কেটে লেনদেন করেছে।

প্রসঙ্গত, কল মানি হচ্ছে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের টাকা ধার নেওয়ার একটি ব্যবস্থা। যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য থাকে, তারাই মূলত ধার দিয়ে এর বিনিময়ে সুদ নেয়। সুদের হার নির্ভর করে কত দিনের জন্য টাকা ধার নেওয়া হচ্ছে, তার ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে এ কল মানি দেওয়া হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.