প্রথমে মেশিনগানের গুলির প্রচণ্ড শব্দ। চারদিকে আতঙ্ক। আর এরপরই রাশিয়ার ক্রোকাস সিটি হল ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
রাশিয়ার বাসিন্দা অ্যালেক্সি পিকনিক রক ব্যান্ডের কনসার্টের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি একজন সংগীত প্রযোজক। গোলাগুলির সময় তিনি ক্রোকাস সিটি হলেই ছিলেন। এএফপিকে জানিয়েছেন, কীভাবে ঘটনার সময় তিনি হলের আসনের পেছনে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। পালানোর আগ পর্যন্ত নিজের অভিজ্ঞতা এএফপিকে জানান তিনি।
মস্কোর উত্তরে ক্রাসনোগোর্স্ক অঞ্চলে ক্রোকাস সিটি হলে সেদিন শত শত মানুষ কনসার্ট দেখতে জড়ো হয়েছিলেন। গান শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে সশস্ত্র ব্যক্তিরা থিয়েটারে ঢুকে পড়েন। তাঁরা নির্বিচার গুলি ছুড়তে শুরু করেন।
রাশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কনসার্ট হলে মুখোশ পরা বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৬০ জন হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের নানা দেশ।
সংগীত প্রযোজক অ্যালেক্সি টেলিফোনে বলেন, গান শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই এই হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শুনি। এক নারী গগনবিদারী চিৎকার করে ওঠেন। সে সময় আরও অনেকে চিৎকার শুরু করেন।’ অ্যালেক্সি আরও বলেন, তিন থেকে চারটি বিস্ফোরণের শব্দ তাঁরা শুনেছেন। এরপর আরও বেশি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
এরপর অ্যালেক্সি চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে দেখেন। মানুষজনকে মঞ্চের দিকে ছুটে যেতে দেখেন তিনি। সে সময় চারদিকে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
টেলিগ্রাম ও রাশিয়ার অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সশস্ত্র দুজন বন্দুকধারীকে কনসার্ট হলের দিকে যেতে দেখা গেছে। এসব ভিডিওতে মেঝেতে অনেক মরদেহ পড়ে থাকার ছবি দেখা গেছে। মানুষকে বাইরে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।
এই ব্যান্ড দলের ভক্তদের অনেকে আসনের পেছনে লুকিয়ে যান। সে সময় হলের মধ্যে গুলি চলছিল।
অন্যদের মতো অ্যালেক্সিও আতঙ্কিত ছিলেন। তিনি একটি বাক্স দিয়ে নিজেকে রক্ষা ও আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন। পালানোর পথ খুঁজছিলেন। বন্দুকধারীদের কাউকে দেখেননি বলে জানান অ্যালেক্সি। তবে যখন তিনি দৌড়াচ্ছিলেন, তখন ধোঁয়া ও ছাই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকতে দেখেন।
আগুন ও বিস্ফোরণ
ঘটনাস্থলে থাকা এক সাংবাদিক বলেন, গ্রেনেড অথবা বোমা থেকে অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো কনসার্ট হল যেন আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়। উদ্ধারকারী দল ও জরুরি সেবা সংস্থাগুলো সারা রাত ধরে উদ্ধারকাজ চালায়।
কালো ধোঁয়ায় আকাশ ছেয়ে যায়। ক্রোকাস সিটি হলে বেজমেন্টে থাকা ও ছাদে আশ্রয় নেওয়া দর্শকদের উদ্ধার করতে চেষ্টা করে যাচ্ছিল রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী।
ঘটনাস্থলে ছিলেন এএফপির এক সাংবাদিক। তিনি ছাদ থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখেছেন। আগুনের লেলিহান শিখা কীভাবে পুরো কনসার্ট হলে ছড়িয়ে পড়ে, তার বর্ণনা দিয়েছেন। রাশিয়ার গণমাধ্যম বলেছে, কনসার্ট হলের ছাদটি আংশিকভাবে ধসে পড়েছে।
শত শত পুলিশ ও দাঙ্গাবিরোধী স্কোয়াড বাহিনী ক্রোকাস সিটি হল বন্ধ করে দেয়। ক্রোকাস সিটি হলের কাছে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি এসে পৌঁছায়। অন্তত তিনটি হেলিকপ্টার ক্রোকাস সিটির ওপরে চক্কর দেয়।
রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, এখনো ছাদে আটকা মানুষদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। কনসার্ট হলের বেজমেন্ট থেকে প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এ হামলার দায় আইএস নিলেও হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ও পরিচয় জানা যায়নি। উগ্রবাদীরা এর আগে রাশিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে সমর্থন করার জন্য হামলা চালিয়েছে।
রাশিয়ার সরকার বলেছে, ন্যাশনাল গার্ড অপরাধীদের খুঁজছে। এ হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।