রমজানের ১০ দিনের মাথায় এসে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে বাজারে। সবজিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম অনেকটাই কমেছে। তবে, চাল, ডাল, চিনিসহ আবশ্যক পণ্যগুলোর দাম এখনও চড়া থাকায় ভাটা পড়েছে এ স্বস্তিতে।
শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শাক-সবজি ছাড়াও পড়তির দিকে পেঁয়াজ-রসুন আর ডিমের দাম। দাম কিছুটা কমেছে মুরগিরও।
তবে, সবজির মধ্যে ভেলকি দেখিয়েছে আলু। সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন সবজিটির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ টাকা। সেইসঙ্গে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছ, মাংস আর মসলার বাজার। আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো।
এবার ভরা মৌসুমেও কম দামে সবজি কিনতে পারেননি ক্রেতা। প্রতিটি সবজির দাম ছিল অস্বাভাবিক। রোজার শুরুতেও কয়েকটির দর ছিল চড়া। তবে এখন কিছুটা সুবাতাস বইছে সবজির বাজারে। যদিও গত শুক্রবার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া দর বাজারে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।
সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজার শুরুতে যে বেগুনের কেজি ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। যে শসার কেজি রোজার শুরুতে ছিল ১০০ টাকারও উপরে, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে।
একইভাবে লাউ, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়াসহ ঝিঙা, করলার মতো সবজিগুলোর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বাজারে দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও। পাইকারিতে বর্তমানে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়, আর খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়।
এছাড়া প্রতি কেজি খিরাই ৩০-৪০ টাকা, গাজর ২০-২৫ টাকা, টমেটো ৩৫-৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, শালগম ২৫ টাকা ও পেঁয়াজের কলি ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে শুক্রবার। আকারভেদে প্রতিপিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকা, ব্রকলি ৫০ টাকা ও প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
এতসব সবজির ভীড়ে দাম বেড়েছে আলুর। সপ্তাহান্তে ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি ভোগ্য এই সবজিটি ।
এদিকে, গত এক সপ্তাহ ধরেই নিম্নমুখী পেঁয়াজের বাজার। ৭ দিন আগেও যে দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, তার দাম এখন প্রায় অর্ধেক বা কাছাকাছি চলে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, ফরিদপুরে হালি পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তার উপর ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে এমন খবরেও বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।
পেঁয়াজের সঙ্গে দাম কমেছে রসুনেরও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতি কেজি দেশি রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। তবে আমদানিকৃত রসুনের দাম এখনও ২০০ টাকা কেজি। এছাড়া আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে আদা; দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি ।
এছাড়া, মাংসের বাজারে সুসংবাদ দিচ্ছে মুরগি। রোজার শুরুতে বেড়ে সর্বোচ্চ ২৩৫ টাকা ছুঁয়েছিল ব্রয়লার মুরগির দর। তবে, শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২১৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ১০-২০ টাকা কমেছে অন্যান্য জাতের মুরগির দামও। মুরগির সঙ্গে কমেছে ডিমের দামও। ফার্মের ডিমের ডজন এখন ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রমজানে ডিমের চাহিদা কমে যায়।
তবে, ক্রেতার কপালে ঘাম ছুটছে মুদি দোকানে গিয়ে। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতিটি ৫০ কেজির চালের বস্তার দাম মানভেদে বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর খুচরায় কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডাল, চিনি, মসলা।
এছাড়া এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫০-১০০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। তবে বাড়েনি খাসির মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়। মাংস বিক্রেতারা বলছেন, গরুর মাংসের দাম খুব শিগগিরই কমার সম্ভাবনা নেই। গরুর দাম বাড়ায় বাড়ছে মাংসের দামও। যারা কম দামে মাংস বিক্রি করেছে এতদিন, তারাও এখন দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।