ভোটকেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলি, এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ

0
114
গুলিতে আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদের উপনির্বাচনে ভোট শুরুর দেড় ঘণ্টার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গোলাগুলি, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা এবং বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নেউরা এলাকায় মুন্সি এম আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও দুজন। আহতরা ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের সমর্থক বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার সমর্থকরা ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে তারা আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নেউরা মুন্সি এম আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হয়েছে আমার কর্মীরা। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’

স্থানীয় ভোটার শহীদুল হক স্বপন বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছিল। কিছু বহিরাগত এসে সারিবদ্ধ ভোটার লাইনে হামলা করে। ঘড়ি ও ঘোড়া প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়। এ সময় তাদের হামলায় তিনজন ভোটার আহত হয়েছেন।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কুমিল্লা নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সি এম আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশেই ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক জহিরুল আহমেদ ও তুহিন নামের এক ব্যক্তিকে মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সুমন গুলি করে। আহত জহিরুল ও তুহিনকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে নেওয়া হয়েছে।

আহত জহির বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের পাশে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম, এ সময় বাস মার্কার সমর্থক মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সুজন আমাকে ও তুহিনকে পুলিশের সামনেই গুলি করে।’

মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বাস প্রতীকের সমর্থকরা ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে দিচ্ছে না। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই পথে পথে পাহারা বসানো হয়েছে যেন আমার ভোটাররা কেন্দ্রে না আসতে পারে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনটা ওয়ার্ডে আমার কোনো এজেন্টকে ঢুকতেও দেওয়া হয়নি। ভোটের পরিবেশ একদম ভালো নয়। আশা করছি নির্বাচন কমিশন যদি উদ্যোগ নেয়, ভোটাররা যদি কেন্দ্রে আসতে পারে, আমি জয়ী হব।

আরেক মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনেক কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আমার ভোটারদের মারধর করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে আসা ভোটারদের গতিরোধ করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় হস্তক্ষেপর জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দিতে এসে অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাস প্রতীকের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা। তিনি কুমিল্লা সদরের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে। অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সূচনা বলেন, ‘আমি সকাল থেকে খোঁজ নিয়েছি। সব কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে।’

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাটি কেন্দ্রের বাইরে ঘটেছে। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। র‍্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত আছে। ভোট চলছে।

প্রিজাইডিং অফিসার হাসান আহমেদ কামরুল বলেন, ‘ঘটনাটি ভোটকেন্দ্রের সীমানার বাইরে ঘটেছে। আমি বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েছি।’

এই বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, ঘটনাটি জানার পর সেখানে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট গেছেন। তবে এ ঘটনায় ভোট কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হয়নি।

এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের উপনির্বাচনে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা। শনিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর এমন অভিযোগ আসে। অন্যদিকে, ভোটগ্রহণ শুরুর পর সকালেই কুমিল্লা হাইস্কুল কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লা হাইস্কুল কেন্দ্রে সকাল আটটার আগেই টেবিল ঘড়ি ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখলে নেওয়া হয়। সকাল ৯টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে বাস প্রতীকের এজেন্ট ছাড়া অন্য প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি। দুই-একটি বুথে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আরেক প্রার্থী নুর উর রহমানের হাতি প্রতীকের এজেন্টকে দেখা গেছে।

এছাড়া ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রিয়াজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুলিশ লাইনস স্কুল, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আকরামউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দৈয়ারা স্কুল, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাকতলা প্রাইমারি ও হাইস্কুল কেন্দ্রেও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.