নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় কাশ্মীরে জনসভা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি

0
124
কাশ্মীরের শ্রীনগরে জনসভায় বক্তৃতা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ছবি: এএনআই

সংবিধানের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর প্রথমবারের মতো কাশ্মীরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বললেন, ‘এটা নতুন কাশ্মীর। এই কাশ্মীর দেখার জন্য দশকের পর দশক অপেক্ষায় ছিলাম।’

জম্মু-কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের বক্সি স্টেডিয়ামের জনসভায় আজ বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পর জম্মু-কাশ্মীর এখন মুক্তির শ্বাস নিচ্ছে। এখন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বাধাবিপত্তি নেই। জম্মু-কাশ্মীর আজ উন্নয়নের নতুন সোপানে চড়েছে। তাই এখানকার যুব সম্প্রদায়ের প্রতিভাও সম্মান পাচ্ছে। তাঁরা নতুন সুযোগও পাচ্ছেন।

এই সুযোগে বিরোধীদের এক হাত নিতেও ছাড়েননি মোদি। কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপির নাম করে তিনি বলেন, এসব দল এত দিন ধরে রাজনৈতিক স্বার্থে ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে। মানুষ তা বুঝে গেছে। সত্যটা জেনে গেছে। আজ সবার জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সবার জন্য সমান সুযোগ চলে এসেছে।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এই নতুন জম্মু-কাশ্মীর দেখার জন্য আমরা দশকের পর দশক অপেক্ষায় ছিলাম। এই কাশ্মীরের জন্যই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জীবন দিয়েছিলেন।’
বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ও রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হওয়ার পর মোদি গত ২০ ফেব্রুয়ারি জম্মু গিয়েছিলেন। উপত্যকায় এই প্রথম।

প্রধানমন্ত্রী আজ যাবেন, সে জন্য শ্রীনগরের রাস্তাঘাট সারানো হয়েছে। তাঁকে স্বাগত জানাতে নানা তোরণ ও কাট আউট লাগানো হয়েছে। নিরাপত্তা করা হয়েছে নিশ্ছিদ্র। বহু সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে। যেসব রাস্তা খোলা, সেখানে প্রতিটি যানবাহন তল্লাশির পর যেতে দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে মোট ৬ হাজার ৪০০ কোটি রুপির বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনাদের মন জয় করার চেষ্টা আমি সব সময় চালিয়ে গেছি। আমার বিশ্বাস, আমি ঠিক রাস্তায় হাঁটছি। আপনাদের হৃদয় জিততে পেরেছি। আরও বেশি করে জেতার চেষ্টা চালাব। এটা মোদির গ্যারান্টি, যার অর্থ, গ্যারান্টি পূর্ণ করার গ্যারান্টি।’

মোদি বলেন, জম্মু-কাশ্মীর দেশের মাথা। বিকশিত ভারত প্রকল্পে এই জম্মু-কাশ্মীর অগ্রাধিকার পাবে।

দেশের মানুষ বিয়ে উপলক্ষে যাতে বিদেশে বিপুল টাকা খরচ না করেন, সে জন্য মোদি কিছুদিন আগেই আবেদন জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, দেশেই বহু স্থান রয়েছে, যেখানে বিয়ের আয়োজন করা যায়। সেই প্রসঙ্গে মোদি তাঁর ভাষণে জম্মু-কাশ্মীরের নাম করেন।

মোদি বলেন, ‘আমি চাই দেশের মানুষ দেশেই বিয়ের আয়োজন করুন। ওয়েড ইন ইন্ডিয়া। তাঁরা জম্মু-কাশ্মীরে আসুন। জি-২০ সম্মেলন জম্মু-কাশ্মীরে সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অথচ একটা সময় ছিল, যখন মানুষ কাশ্মীরের নাম শুনলে ভয়ে পিছিয়ে যেত। আজ ২ কোটি পর্যটক কাশ্মীরে এসে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।’

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। সেই সময় এই রাজ্য দ্বিখণ্ডিতও করা হয়। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। সেই থেকে এই দুই অঞ্চলে ভোট হয়নি। কবে হবে, তা-ও এখনো নিশ্চিত নয়।

একদা জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে শান্তি ও সুস্থিতি ফেরার দাবি জানানো হলেও প্রকৃত ঘটনা হলো, নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বিন্দুমাত্র কমেনি। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনও পদে পদে ব্যাহত হয়।

ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ আজ বৃহস্পতিবার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ভিড় দেখাতে প্রশাসনের সাহায্যে জোর করে বক্সি স্টেডিয়ামে লোক আনা হয়েছে। এই ঠান্ডার মধ্যে ভোর থেকে লোকজনকে জড়ো করা হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে স্কুল বাস বোঝাই করে তাঁদের নেওয়া হয়েছে।

ওমর আবদুল্লাহ বলেন, গোদি মিডিয়া ভিড় দেখাবে, কিন্তু এটা বলবে না, তাদের কীভাবে জবরদস্তি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মীদের বলা হয়েছে, জনসভায় না গেলে তাঁদের প্রশাসনিক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.