ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে গ্রামাঞ্চলের ১৪ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, শহরে এ হার আরও বেশি। এই আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান ২৬ শতাংশ। সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালে আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা ও ময়মনসিংহের আট উপজেলায় সমীক্ষাটি চালানো হয়।
সমীক্ষায় দেখা যায়, এ দুই বিভাগে ৭০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর গ্রামের ১৪ শতাংশ মানুষ এরই মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। শহরে বসবাসকারীদের মধ্যে আক্রান্তের হার আরও বেশি বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়। ২৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ১১ হাজার মানুষের ওপর সমীক্ষাটি চালানো হয়।
সমীক্ষায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত বলে শনাক্তদের ৩৩ দশমিক ২ শতাংশের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছর, ২৫ দশমিক ৬ শতাংশের বয়স ৩৬ থেকে ৪৫ বছর, ২১ দশমিক ৫ শতাংশের বয়স ৪৬ থেকে ৫৫ বছর, ১৯ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ৫৬ থেকে ৬৫ বছর। সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত প্রায় ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ তামাক সেবন করেন। কায়িক পরিশ্রম করেন না ৬৭ শতাংশ। দৈনিক পাঁচ প্রকার শাকসবজি ও ফলমূল খান না ৯৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০ দশমিক ৬ শতাংশের পারিবারিক ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে।
এমন পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে আজ সারাদেশে পালিত হচ্ছে ‘ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস’ ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটির এবারের মূল প্রতিপাদ্য– ‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধের এখনই সময়’। এ উপলক্ষে সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বারডেম ক্যাম্পাস এবং এনএইচএন ও বিআইএইচএসের বিভিন্ন কেন্দ্র-সংলগ্ন স্থানে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হবে। দুপুরে হবে আলোচনা সভা। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের প্রকল্প পরিচালক ডা. বিশ্বজিত ভৌমিক বলেন, ‘ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখেছি মাত্র ২০ শতাংশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশেও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষ রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন।’
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (একাডেমি) অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান বলেন, ‘পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ হৃদরোগ, ৩৫ শতাংশ কিডনিজনিত ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। এসব জটিলতার কারণে রোগীর ব্যয় বেড়ে যায় এবং একসময় মৃত্যু হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাসের কারণে ডায়াবেটিস ঝুঁকি বাড়ে ১১-২৬ শতাংশ, কায়িক পরিশ্রম না করলে ঝুঁকি বাড়ে ২০ শতাংশ। এ ছাড়া অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবারে ১৮-৪০ শতাংশ ও কোমল পানীয় পানে ২৬ শতাংশ।
তবিবুর রহমান