পাকিস্তানে আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট নয়, এই অধিবেশন ডেকেছে জাতীয় পরিষদ সচিবালয়। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি অধিবেশন আহ্বান না করায় জাতীয় পরিষদ সচিবালয় এই অধিবেশন ডেকেছে।
পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে অধিবেশন আহ্বান করার কথা। সেই হিসাবে আগামী বৃহস্পতিবারের (২৯ ফেব্রুয়ারি) মধ্যেই অধিবেশন আহ্বান করতে হতো।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ছিলেন ইমরান খানের প্রতিষ্ঠিত দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা। ২০১৮ সালের আগস্টে ইমরান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের মাসে পিটিআই মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আরিফ আলভি। মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।
জাতীয় পরিষদ সচিবালয় বলছে, নির্বাচন হওয়ার পর ২১তম দিনে অধিবেশন ডাকার জন্য প্রেসিডেন্ট বা স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন হয় না।
এর আগে কয়েকটি সূত্র জিও নিউজকে জানিয়েছিল, জাতীয় পরিষদের বিদায়ী স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ নতুন অধিবেশন ডাকার ‘সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন। সাংবিধানিক সংকট বাড়তে থাকায় তিনি ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকতে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি অধিবেশন আহ্বানে রাজি না হওয়ায় জাতীয় পরিষদ সচিবালয় নতুন অধিবেশন ডেকেছে। প্রেসিডেন্ট মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংরক্ষিত আসনগুলো বণ্টন না হওয়ায় জাতীয় পরিষদ অসম্পূর্ণ রয়েছে।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) নির্বাচনে জয়ী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংখ্যানুপাতিক হারে জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত ৭০টি আসন বণ্টন করে দেওয়ার কথা। এই আসন পেতে পিটিআই-সমর্থিত জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ইতিমধ্যে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে (এসআইসি) যোগ দিয়েছেন। কিন্তু এসআইসি সংরক্ষিত আসন পাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
পাকিস্তানে কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতৃত্বে ছয়দলীয় জোট কাজ করছে। ২ মার্চের মধ্যেই এ সরকার গঠিত হতে পারে। জাতীয় পরিষদে ছয়দলীয় জোটের ২০৭ সদস্য হয়ে যাবে। এতে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। ৩৩৬ সদস্যের পার্লামেন্টে সরকার গঠনের জন্য ১৬৯ আসন প্রয়োজন।
পিএমএল-এন ও পিপিপির সমঝোতা অনুযায়ী পিএমএল-এনের নেতা শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। আর পিপিপির নেতা আসিফ আলী জারদারি প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। অন্যদিকে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এসআইসিতে যোগ দিয়ে বসতে যাচ্ছেন বিরোধী দলে।
রেকর্ড গড়লেন মরিয়ম
জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে সাড়ে সাত দশকের বেশি সময়ের ইতিহাসে প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হলেন মরিয়ম নওয়াজ। গতকাল সোমবার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই প্রদেশকে পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রক মনে করা হয়।
মরিয়ম পিএমএল-এনের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি পিএমএল-এনের নেতা ও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে গতকাল মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে ভোটাভুটি হয়। পিএমএল-এন মনোনীত প্রার্থী ছিলেন মরিয়ম। ভোটাভুটি বর্জন করে এসআইসি। সংরক্ষিতসহ ৩৭১ আসনের প্রাদেশিক পরিষদে মরিয়ম ২২০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ
এদিকে সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) মনোনীত মুরাদ আলী শাহ। ১৪৮ আসনের প্রাদেশিক পরিষদে তিনি ১১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি তৃতীয়বারের মতো এই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হলেন।
তবে জামায়াত-ই-ইসলামি ও পিটিআই আইনপ্রণেতারা ভোটাভুটিতে অংশ নেননি। এমনকি ভোটাভুটির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায় পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতাদের।