নওয়াজ শরিফ নয়, শাহবাজ ফিরছেন প্রধানমন্ত্রীর পদে

0
144
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ শুক্রবার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার মধ্যেই লাহোরে দলীয় কার্যালয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তাঁর পাশে (ডানে) ছোট ভাই ও দলের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ, ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানে জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে নওয়াজ শরিফ নেতৃত্বাধীন পিএমএল-এন ও পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) কয়েকটি দল। এই দলগুলোই দুই বছর আগে ইমরান খান সরকারকে উৎখাত করে পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন করেছিল। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইসলামাবাদে দলগুলোর নেতাদের বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি নতুন জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। এ সময় শাহবাজ শরিফও একই কথা বলেন।

নতুন এই সরকারেরও নেতৃত্বে থাকবেন শাহবাজ শরিফ। এত দিন পিএমএল-এন থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে নওয়াজ শরিফের কথা বলা হচ্ছিল। গতকাল রাতে হঠাৎ করে নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ছোট ভাই শাহবাজকে মনোনীত করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেয়ে মরিয়ম নওয়াজের নাম ঘোষণা করেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে একযোগে জাতীয় ও চার প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে ভোট হয়। এতে কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জাতীয় পরিষদে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯২, নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ৭৫ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি ৫৪ আসন পেয়েছে। বাকি আসন পেয়েছে অন্য দলগুলো।

পাকিস্তানে সরকার গঠন করতে জাতীয় পরিষদে অন্তত ১৩৪ আসন দরকার। এ জন্য জোট সরকার গঠন করতে শুরু থেকেই পিপিপি এবং জাতীয় পরিষদে ১৭ আসন পাওয়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন পিএমএল-এন নেতারা।

গত রোববার লাহোরে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির বাসায় দুই দলের নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে দুই দল জানায়, পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঐকমত্যে পৌঁছেছে তারা। তবে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে চলছিল আলোচনা। পিপিপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে বিলাওয়ালকে চাওয়া হচ্ছিল।

এসব বিষয় নিয়ে গত সোমবার ও গতকাল পিপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়। এরপর গতকাল বিলাওয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি নিজেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থিতা থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। কেন্দ্রে পিএমএল-এনের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন তাঁরা। তবে সরকারে থাকবেন না। কেন্দ্রে মন্ত্রিসভায় থাকার ইচ্ছাও নেই তাঁদের।

তাঁর ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর গতকাল রাতে বৈঠকে বসেন পিএমএল-এন, পিপিপি, এমকিউএম-পি ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদের (পিএমএল-কিউ) নেতারা। ওই বৈঠক শেষে জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এমডব্লিউএমের সঙ্গে জোট করবে পিটিআই

পিএমএল-এনের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠনপ্রক্রিয়ার অগ্রগতির মধ্যেই ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গঠনের আশা করছিল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। গতকাল দলটির চেয়ারম্যান গহর আলী খান বলেন, কেন্দ্রে কিংবা খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে ‘নিজেদের’ সরকার গঠন করবেন তাঁরা।

গহর খানের ওই মন্তব্যের পর গতকাল ইসলামাবাদে পিটিআই মুখপাত্র রউফ হাসান বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরানের নির্দেশনায় পাকিস্তানের কেন্দ্র ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে সরকার গঠনে তাঁরা মজলিস-ই-ওয়াহদাত-মুসলিমিনের (এমডব্লিউএম) সঙ্গে হাত মেলাবেন। আর খাইবার পাখতুনখাওয়ায় জামায়াত-ই-ইসলামির সঙ্গে জোট করবেন তাঁরা। তবে পিএমএল-এন, পিপিপি ও এমকিউএম-পির সঙ্গে সমঝোতায় যাবেন না।

খাইবার পাখতুনখাওয়ায় নিহত ৩

নির্বাচনে ফল জালিয়াতির অভিযোগে গতকালও পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন পিটিআইসহ অন্যান্য দলের সমর্থকেরা। ফল কারচুপির অভিযোগ এনে গতকাল বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা ও মাস্তাং শহরে হরতাল ডাকা হয়। সিন্ধু প্রদেশের বিভিন্ন শহরেও বিক্ষোভ করেছে জমিয়ত উলামা-ই-ফজল (জেইউআই-এফ)।

সোমবার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের ডেরা ইসমাইল খান শহরে পিপিপির শোভাযাত্রায় গুলি চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচজন। তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীদের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।

নজর রাখছে জাতিসংঘ

পাকিস্তানের নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব। যেকোনো ধরনের সংঘাত থেকে বিরত থাকতেও বলেছেন। এ ছাড়া উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।’

পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটনে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাক্কানি রয়টার্সকে বলেন, দুই বছরের অস্থিরতার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন পাকিস্তানে একটি কার্যকর সরকার চায়। পাকিস্তানের মানুষের কাছে যে সরকারের অন্তত কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্যতা থাকবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.