মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নকল না করলেও এক পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র ছেঁড়ার ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. টিটো মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক কাজী আফজালুর রহমানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সদস্যসচিব করা হয়েছে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের থোরাসিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আলম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামাল হোসেন।
এর আগে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। সেদিন দুপুরে ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ জানাতে অধিদপ্তরে ছুটে আসেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
পরীক্ষার হলে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায় আচরণের সুরাহা চাইতে এসে লাঞ্ছিত হন ওই পরীক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনায় জড়িতরা খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ৩টার দিকে ব্রিফিং শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অধিদপ্তর ত্যাগ করার ঠিক পরপরই সেখানে হট্টগোল ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এক ব্যক্তিকে টেনেহিঁচড়ে অধিদপ্তর ভবনের নিচ থেকে উপরে তোলার চেষ্টা করছিলেন কয়েকজন ব্যক্তি। বিষয়টি নজরে আসে সাংবাদিকদের। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে রেহাই পান ওই ব্যক্তি।
জানা যায়, ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম ডা. রেদোয়ান। তিনি জানান, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে স্ত্রীর ছোটবোন হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া অন্যায় আচরণের শিকার হন। সে বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন তিনি।
পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন অধিদপ্তর ত্যাগের সময় তার হাতে এ বিষয়ে অভিযোগও তুলে দিয়েছিলেন তিনি। তবে মন্ত্রী চলে যাওয়ার পরেই তার ওপর হামলে পড়েন কয়েকজন ব্যক্তি। তারা নিজেদের অধিদপ্তরের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে ডা. রেদোয়ানকে টানতে টানতে দোতলায় নেওয়ার চেষ্টা করেন।
এ সময় হুমাইরার পিতামাতাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে সাহায্য চান।
ভুক্তভোগীরা জানান, হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শেখ কামাল ভবনের অষ্টম তলার ৮২৩ নম্বর কক্ষে। পরীক্ষা শুরুর প্রায় ৪০ মিনিট পর হুমাইরার পাশে বসা এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়। এ সময় হলের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা হুমাইরার উত্তরপত্রও কেড়ে নেন এবং ছিঁড়ে ফেলেন।
এ সময় দাবির মুখে যাচাই করে হুমাইরার উত্তরপত্র সঠিক ছিল বলে প্রমাণ হয়। পরে দুঃখ প্রকাশ করে তাকে নতুন একটি ওএমআর শিট দেওয়া হয়। তবে তখন সময় বাকি ছিল অল্প। এতে হুমাইরার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। কক্ষের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির ভুলের শিকার হন ওই ভর্তিচ্ছু।
হুমাইরার চাচা আবু নাসের সেলিম বলেন, ‘ডিভাইস জব্দের ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক না থাকলেও আমার ভাতিজির চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন শেষ। এ বিষয়ে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দিতেই রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসেছিলাম।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রে অবস্থিত কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ দিতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া এ ঘটনায় জিডি করতে শেরে বাংলা নগর থানায় গেলে সেখান থেকেও অধিদপ্তরে যোগাযোগের কথা বলা হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। মহাপরিচালক বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীর অভিযোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এ বিষয়ে আমরা ভর্তি কমিটির সঙ্গে কথা বলবো। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করে দেখবে আসলে পরীক্ষার দিন শেকৃবির হলে কী ঘটেছিলো।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে এ বিষয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।