বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে প্রণোদনামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে অনেক দেশ। বাংলাদেশে রপ্তানিতে উৎসাহ দিতে প্রণোদনা বাড়ানো তো দূরে থাক, হঠাৎ করে মাঝ পথে এসে বস্ত্র খাতের পাঁচ ধরনের পণ্যে ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় প্রায় ৫৬ শতাংশ পণ্য রপ্তানি হয়। এছাড়া অন্য সব খাতে ভর্তুকির হার কমানো হয়েছে। এমন এক সময়ে ভর্তুকিতে বড় পরিবর্তন এল যখন তৈরি পোশাক খাতের বেতন বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাসের সংকটের কারণে চাপে আছেন উদ্যোক্তারা।
ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সরকার থেকে হঠাৎ করে নেওয়া এমন সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অবশ্য সরকার এখন চরম সংকটে আছে। যে কারণে বিভিন্ন খাতের প্রণোদনা ও সরকারের কাছে পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। শুধু সার, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর পাওনা ২৫ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে সরকার বন্ড ইস্যু করছে। এখন ভর্তুকির চাপ কমাতে রপ্তানিতে প্রণোদনা কমানো হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, বস্ত্র খাতের পাঁচটি এইচএস কোডের আওতায় রপ্তানি হওয়া পণ্যে কোনো নগদ সহায়তা দেওয়া হবে না। এইচএস কোডগুলো হলো– ৬১০৫, ৬১০৭, ৬১০৯, ৬১১০ এবং ৬২০৩। এই পাঁচটি কোডে বস্ত্র খাতের মোট ৫৬ শতাংশ রপ্তানি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যেহেতু রপ্তানি আদেশ নেওয়ার সময় ভর্তুকিসহ হিসাব করে তারা পণ্যের দর নির্ধারণ করেন। ফলে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সরকার মাঝ পথে এসে এভাবে হঠাৎ ভর্তুকি তুলে নেওয়া এবং কমানোয় তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, দেশের রপ্তানি বাণিজ্য উৎসাহিত করতে ৪৩টি পণ্য ও খাতে নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। ডব্লিউটিওর বিধান অনুসারে রপ্তানি ভর্তুকি হিসেবে বিবেচিত হয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলে কোনো ধরনের নগদ সহায়তা দেওয়া যাবে না। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। উত্তরণের পর সম্পূর্ণ নগদ সহায়তা একবারে প্রত্যাহার করলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। যে কারণে বিভিন্ন খাতে নগদ সহায়তার হার অল্প অল্প করে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩০ জুন জাহাজি করা পণ্যে নতুন হার প্রযোজ্য হবে।
নতুন হার অনুযায়ী, রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র–ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। আগে যা ৪ শতাংশ ছিল। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের প্রণোদনার হার ৩ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তাও ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। নীট, ওভেন ও সোয়েটারসহ তৈরি পোশাক খাতের সকল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অতিরিক্ত ৪ শতাংশই বহাল থাকবে। তবে নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এসব খাতে নির্ধারিত পাঁচটি এইচএস কোডের রপ্তানির বিপরীতে কোনো নগদ সহায়তা মিলবে না।