বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্লস পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকটা তড়িঘড়ি করেই সম্পন্ন হচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন এ সংস্থার সর্বোচ্চ পদের নিয়োগপ্রক্রিয়া। বিধি বদল করে এমডি নিয়োগের পুরো ক্ষমতা নেওয়া হয়েছে পরিচালনা পর্ষদের হাতে। চূড়ান্ত বাছাইয়ের আগে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন সংস্থার সাবেক এমডিসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ–সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমডি নিয়োগে পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সবাই বিএসসিপিএলসির পরিচালক পর্ষদের সদস্য। তাঁরা চারটি আবেদন (জীবনবৃত্তান্ত) বাছাইয়ে তিনটি বৈঠক করেছেন। এক সূত্রে জানা যায়, কমিটির সদস্যরা এক দিনে চার ঘণ্টার ব্যবধানে দুবার বৈঠক করেছেন। এ দুটি বৈঠকে সম্মানী হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক লাখ টাকা।
বিএসসিপিএলসির এমডি নিয়োগে গত ২৮ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে ১১ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন আহ্বান করা হয়। এরই মধ্যে ২৮ জানুয়ারি চূড়ান্ত পর্বে তিন প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তাঁদের একজন বিএসসিপিএলসির সাবেক এমডি। অপর দুজন হলেন টেলিফোন শিল্প সংস্থা লিমিটেডের সাবেক এমডি ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা।
কোম্পানির সূত্র জানায়, কাল মঙ্গলবার পরিচালনা পর্ষদের সভায় এমডি নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসসিপিএলসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ নিয়োগে অনেকটা তাড়াহুড়া লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিএসসিপিএলসির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান। তিনি বলেন, তাড়াহুড়া করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানেন না। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন এবং প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ হবে না বলেও জানান তিনি।
নিয়োগসংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বাছাই কমিটি ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় বিএসসিপিএলসির কার্যালয়ে একটি সভা করে। এটি ছিল তাদের দ্বিতীয় সভা। এ সভায় প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে সম্মানী বরাদ্দ ছিল। কমিটির একজন বাদে বাকি চারজন সম্মানীর অর্থ নেন। একই দিন বেলা আড়াইটায় একই স্থানে আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানও প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে সম্মানী বরাদ্দ ছিল। এ বৈঠকেও একজন বাদে অন্যরা সম্মানীর অর্থ নেন। জানা গেছে, দুটি বৈঠকেই সশরীর উপস্থিত থাকার পাশাপাশি অনলাইনেও যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল।
একই দিনে দুই সভা, অংশ নেওয়ার পদ্ধতি ও সম্মানীর অর্থ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে একাধিক সদস্যর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কেউ কথা বলতে রাজি হননি। বাছাই কমিটির আহ্বায়ক ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার ই কায়নাত বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কোনো কথা বলবেন না।
বাছাই কমিটির সদস্যরা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. আবদুল মোমিন, অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব নাছিমা আকতার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (সিএসই) অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক পরিচালক সৈয়দ মামনুন কাদের।
বিএসসিপিএলসি সূত্র জানায়, এমডি নিয়োগের জন্য কোম্পানির সংঘবিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত ৫ ডিসেম্বর চিঠি দেওয়া হয়। তাতে ‘সরকার দ্বারা মনোনীত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ হবে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের’ স্থলে ‘সরাসরি পরিচালনা পর্ষদই নিয়োগ দেবে’ বিধি যুক্ত করা হয়।
সংঘবিধি সংশোধন করে এমডি নিয়োগের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করা হলেও বিএসসিপিএলসির দ্বিতীয় বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) ডাকা হয়েছে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি।
জানতে চাইলে কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজীব উল আলম বলেন, ‘সংঘবিধির সংশোধনের সিদ্ধান্ত তাঁরা নিতে পারেন। কিন্তু সংশোধনী না হওয়া পর্যন্ত যদি পরিচালনা পর্ষদ এমডি নিয়োগ দিয়ে থাকে, সেটি বৈধ হবে না। তাঁরা যে বিশেষ সাধারণ সভা ডেকেছেন, সেখানে ৭৫ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারের অনুমোদন লাগবে। সেই অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান বিধানই বহাল থাকবে।’
ঢাকা