জিএম কা‌দেরের বিরু‌দ্ধে অ‌ভি‌যোগ ক‌রে জাপার ৯৬৮ নেতার পদত্যাগ

0
121
গণপদত্যাগ অনুষ্ঠান

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অ‌ভি‌যোগ তু‌লে এসবের প্রতিবাদে দলটি থেকে পদত্যাগ ক‌রে‌ছেন বি‌ভিন্ন পর্যা‌য়ের ৯৬৮ জন নেতা। তারা ব‌লে‌ছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নন, জিএম কাদের স্বৈরাচার। তার অযোগ্য নেতৃত্বে জাপা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ স‌ম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দি‌য়ে এসব কথা ব‌লে‌ছেন নেতারা। ঢাকা মহানগর উত্তর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, পল্লবী, হাতিরঝিল, মিরপুর, দারুসসালাম, শেরেবাংলা নগর, বাড্ডা, রূপনগর থানা জাপান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৯৬৮ নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। গণপদত্যাগ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নি‌য়ে ক‌য়েক  হাজার নেতাকর্মী জমা‌য়েত হন।

জাপার ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান সংবাদ স‌ম্মেল‌নে বলেন, ‘জিএম কাদের বছরখা‌নেক ধ‌রে ব‌লে আস‌ছি‌লেন- জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। সরকারের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলে নি‌জে‌কে জাতীয় নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টাও করেছেন। জাপার নেতাকর্মীরাও তাই তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের আগে বুঝতে পারলাম, জিএম কা‌দের গোপনে সরকারে সঙ্গে আঁতাত করে নিজের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব মু‌জিবুল হক চুন্নু মাত্র ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাবার বিনিময়ে গোটা জাপা‌কে বিক্রি করে দেন।’

মহানগর উত্তর জাপার সদ্য বিলুপ্ত ক‌মি‌টির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ব‌লেন, ‘দল‌কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের পদত্যাগের দাবি ওঠে। কিন্তু দ‌লের এই দুরবস্থার মধ্যেও চেয়ারম্যান

স্বেচ্ছাচারিতার নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করে নিবেদিতপ্রাণ নেতা‌দের একের পর এক অব্যাহতি দিয়ে চলেছেন। তিনি এরশাদের নাম-নিশানা মুছে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন। জিএম কাদের নেতাকর্মীদের প্রতিবাদের ভাষা বুঝতে না পেরে প্রতিহিংসাবশত দ‌লের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়াও কয়েকজন নেতাকে মৌখিকভাবে অব্যাহতির কথা জানিয়েছেন।’

মহানগর উত্তর জাপার বিলুপ্ত ক‌মি‌টির প্রচার সম্পাদক এসএম হাসেমের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনের ম‌ঞ্চে ছি‌লেন অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাহিন আরা সুলতানা রিমা, হাতিরঝিল থানা জাপা সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুম, মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি নজরুল ইসলাম মুকুল, রূপনগর থানা সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ খান, শেরেবাংলা থানা সভাপতি আশরাফুল হক শিবলী, আদাবর থানা সভাপতি মকবুল হোসেন মুকুল, পল্লবী থানা সভাপতি আসাদ খান সামী, ছাত্র সমাজের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদপুর থানা যুব সংহতির সভাপতি আমজাদ হোসেনসহ বিভিন্ন থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী, আমানত হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা খুরশিদ আলম খুশুসহ আরও অ‌নে‌কে ছি‌লেন। সবাই এক‌যো‌গে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

আশরাফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ‘জিএম কাদের জাপা‌কে প্রাইভেট কোম্পানিতে রূপান্তরিত করেছেন। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন তাঁর কাছে নেই, মূল্যায়ন করা হয় তাঁর চাটুকারদের। এর প্রতিবাদে জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করছি।’

হাতিরঝিল থানা সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, ‘৮২ সাল থেকে এ দল করছি। পল্লীবন্ধু এরশাদের গড়া দল ধ্বংস ক‌রে‌ দি‌য়ে‌ছেন জিএম কাদের।’

মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি নজরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘যে ইমাম নামাজে ভুল করে তার নেতৃত্বে নামাজ পড়া যায় না। তেমনি জিএম কাদেরের মত লোকের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি করা সম্ভব নয়।’

পল্লবী থানা সভাপতি আসাদ খান সামী বলেন, ‘জিএম কাদের নিজেকে জনবন্ধু ব‌লে দাবি করেন। উনি তো কর্মীবন্ধুই হতে পারেননি। জনবন্ধু হন কীভাবে?’

সাহিন আরা সুলতানা রিমা তার বক্তব্যে বলেন, ‘এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টির সবচেয়ে অযোগ্য নেতা জিএম কাদের। কর্মীরা গণপদত্যাগ করছেন, অথচ তাঁর লজ্জা নেই। থাকবে কী করে, দল তো তিনি বানাননি।’

অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে মুদির দোকান মনে করেন। সারাদিন বনানীর দোকানে বসেন। আর তার সিন্ডিকেট দিনভর দোকানদারী করে সন্ধ্যার সময় জিএম কাদেরকে লেনদেনের হিসাব দেন। সারাদেশের সঙ্গে জিএম কাদেরের কোনো যোগাযোগ নেই। দল‌কে তিনি ধ্বংস করে ফেলেছেন। দলের এই বিপর্যয়ের জন্য জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবি করছি।’

আসন বন্টন নি‌য়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচ‌নের আ‌গে থে‌কেই অ‌স্থিরতা চল‌ছে জাপায়। আওয়ামী লীগ ২৬ আসন ছাড়‌লে ৭ জানুয়া‌রির নির্বাচ‌নে মাত্র ১১ আসন ভ‌রাডু‌বি হ‌য়ে‌ছে জাপার। এর জন্য জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগ দা‌বি তু‌লে‌ছেন লাঙ‌লের পরাজিত প্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের নেতাদের মতামতের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেঈমান হয়েছেন জিএম কাদের। লাঙলের প্রার্থীদের মাথা বিক্রি করে সরকারের কাছ থেকে টাকা পেয়েছেন। সেই টাকার হিসাব চান লাঙলের প্রার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। জাপা চেয়ারম্যান তাঁর স্ত্রী শেরীফা কাদেরের জন্য আসন বাগাতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বলি দিয়েছেন।’

সম‌ঝোতার বাই‌রেও ২৩৯ আস‌নে লাঙ‌লের প্রার্থী ছিল। তিন‌টি বা‌দে সব আস‌নে জামানত বা‌জেয়াপ্ত হ‌য়ে‌ছে। প্রার্থী‌দের অ‌ভি‌যোগ, বিএন‌পি‌বিহীন নির্বাচ‌নে আওয়ামী লী‌গের সু‌বিধার জন্য প্রার্থী দেন জিএম কা‌দের। কিন্তু ভো‌টে না‌মি‌য়ে কা‌রও খবর নেন‌নি। নির্বাচ‌নে অংশ নি‌য়ে সরকা‌রের কাছ থে‌কে টাকা পে‌লেও, প্রার্থী‌দের দেন‌নি। এ কারণ দে‌খি‌য়ে, ভো‌টের পর থে‌কে বি‌ক্ষোভ চল‌ছে জাপায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.