বনভান্তের ১০৫তম জন্মদিন উদযাপিত

0
150
রাজবন বিহারে বনভান্তের দেহধাতু
রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ১০৫তম জন্মদিন যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা উদযাপিত হয়েছে। সকাল ৬.০০ঘটিকায় রাজবন বিহারে কেক কাটার মধ্য দিয়ে জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
জন্মদিনের অনুষ্ঠানটি আজ সকালে সম্পন্ন হলেও গত কয়েক দিন আগে থেকে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম করা হয় রাজবন বিহারে। প্রথম গণশ্রমণ, দ্বিতীয়ত স্থায়ী শ্রমণদের উপসম্পদা প্রদান, তৃতীয়ত সকল শিষ্য সংঘের সম্মেলন এবং সংঘের প্রশাসনিক কমিটি গঠন ও নিদের্শনা প্রদান।
গতকাল দুপুরে সীমাঘরে নিয়ে স্থায়ী শ্রমনদেরকে উপসম্পদা প্রদান করা হয়। রাতে সকল শিষ্য সংঘকে নিয়ে দুই ঘন্টা ব্যাপী ভিক্ষুসংঘের সম্মেলন অনু্ষ্ঠিত হয়। রাত ১২টায় বনভান্তের শিষ্যমন্ডলীরা ফুল দিয়ে এবং আতশবাজি ফাটিয়ে শ্রদ্ধা জানান। প্রতি বছরের ন্যায় জন্মদিনের কেক কাটেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
রাজবন বিহার আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ভান্তে
সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে ১৯২০ সালে ৮ জানুয়ারী মোরঘোনা গ্রামে ১১৫ নং মগবান মৌজায় রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর গৃহী নাম ছিল রথীন্দ্র লাল চাকমা। পিতা হারু মোহন চাকমা এবং মাতা বীরপুদি চাকমা। তিনি পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে সর্বজেষ্ঠ। ব্রিটিশ আমলে তিনি উচ্চ প্রাইমারী সম্পন্ন করেন।

ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবির ভান্তে দেশনা প্রদান করছেন।
২৯ বছর বয়সে প্রব্রজ্যা গ্রহন করেন এবং ২৭ বছর ধ্যান সাধনা করে সাধনা পর্ব সমাপ্তি করে বৌদ্ধ ধর্মের মূল নীতি অনুসরে জনগণের কাছে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। তিনি প্রথমে ধনপাতায় ১২ বছর, দীঘিনালায় ১০ বছর, তিন টিলায় ৫ বছর ধ্যান সাধনা করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৭সালে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে এসে ৩০ জানুয়ারী ২০১২সাল পরিনির্বাণ পর্যন্ত অবস্থান করেন।
চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বক্তব্য রাখছেন।
আজকের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়, রাঙ্গামাটির নবনির্বাচিত ও প্রাক্তন সাংসদ দীপংকর তালুকদার এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, পরিচালনা কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, প্রাক্তন উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, প্রধান উপসিকা সমীরা দেওয়া(রুচিরামা), শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন সদস্য নিরুপা দেওয়া, চাকমা গানের কিংবদন্তী রনজিত দেওয়ান প্রমুখ।

নবনির্বাচিত সংসদ দীপংকার তালূকদার
অনু্ষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গৌতম দেওয়ান, দীপংকার তালুকদার ও চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় এবং ভিক্ষুসংঘ থেকে দেশনা প্রদান করেন ইন্দগুপ্ত মহাস্থবির ও প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ভান্তে।
গৌতম দেওয়ান বলেন, বনভান্তে যে সময় ভিক্ষু হয় সে সময় মৌলিক বুদ্ধ ধর্মের কোন প্রচলন ছিল না। বনবান্তের আবির্ভাবে বর্তমানে ধর্মের এত অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বনভান্তের জীবনী তিনি বিশ্লেষণ করেন।
রাজব বিহারে বনভান্তের শিষ্যমন্ডলীর সম্মেলন
নবনির্বাচিত সাংসদ দীপংকর তালুকদার বলেন, বনভান্তের উপদেশে ভোটের সময় কারোর চরিত্র হনন করিনি বিগত সাতবার নির্বাচনীতে অংশ গ্রহন করেছি। ১৯৭২/১৯৭৩ সালে বনভান্তে যে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করেছেন, তাঁর সব কিছুই বর্তমানে প্রতিফলন ঘটছে।
চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, বনভান্তের জন্মদিন আমরা পালন করি কারণ তিনি দেব মনুষ্য ও প্রাণিকুলের মঙ্গলের জন্য কাজ করেছেন কিন্ত যারা বর্তমানে কিছু ভিক্ষু রয়েছেন, তারাও নিজের জন্মদিন পালন করছেন । তারা কি জন্মের ফলে দেব মনুষ্য ও প্রাণির কল্যাণ করেছেন কিনা ভেবে দেখবেন। তিনি আরো বলেন বিশ্বশান্তি প্যাগোডাসহ যা মুখ থেকে বের করেছেন সবই কল্যাণকর।

রাজবন বিহারে সীমাঘরে স্থায়ী শ্রমনদের উপসম্পদা প্রদান
ধর্মদেশনায় ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবির ভান্তে বলেন, বনভান্তে বলেছেন বুদ্ধি জ্ঞান কৌশলের মাধ্যমে কাজ করার জন্য। তিনি আরো বলেন, একজনের ভাগ্যে দশজন খায়, একজনের দোষে দশজনে পায়। একটি উদাহরণের মাধ্যমে দীপংকর তালুকদারকে বলেছেন আপনার ভাগ্য দিয়ে দশজন ভাত খাবে কিন্তু আপনার একটা দোষে জনগণ কষ্ট পাবে। সে কারণে বুদ্ধি জ্ঞান কৌশল অবলম্বন করে কাজ করবেন।
এছাড়া কয়েক হাজার পূণ্যার্থী অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং বনভান্তেকে ফূল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.