চীন-রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কাদেরকে প্রশ্ন বিদেশি সাংবাদিকের

0
150
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক দিন আগে আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে দলটি। সেখানে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পাশাপাশি কিছু বিদেশি সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এক বিদেশি সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশ কেন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে?

জাপানের সেই সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশ ও জাপানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। জাপান বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই দেশের (চীন ও রাশিয়া) সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে? এ সম্পর্ক রাখার সুবিধা কোথায়?

জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সাথে শত্রুতা নয়। আমাদের সবার সাথে বন্ধুত্ব আছে। বিশ্বের অনেক দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে। উন্নত দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক আমাদের উন্নয়নের জন্য। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সম্পর্ক আছে কিছু দেশের সাথে, যেমন ভারত, জাপান, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স। মেট্রোরেলের অর্থ জোগাচ্ছে জাপান। আমার পার্থক্য করা উচিত হবে না। বন্ধু বন্ধুই। সবাই আমাদের বন্ধু।’

আওয়ামী লীগের এই সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। কখনো কখনো সাংবাদিকদের প্রশ্নকে ওবায়দুল কাদের পক্ষপাতমূলক বলেও অভিযোগ করেন।

এই নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনটা হতে দেন। গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, সেটা বিদেশিরাই বলবেন। আমরা তো বলছি, টার্ন আউট, অংশগ্রহণ সন্তোষজনক হবে। এ দেশে একটা ভালো নির্বাচন হবে। প্রধান বিরোধী দল যেখানে নেই, এটা আমরা রিগ্রেট (অনুশোচনা) করি। বিএনপি থাকলে নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতো, সেটা আমরা স্বীকার করি। তারপরও এই নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে।’

বিদেশি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করছে, বাংলাদেশে একটি ওয়ান সাইডেড (একতরফা) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কারণ, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করেছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে ওয়ান সাইডেড ইলেকশন হচ্ছে না, এখানে হচ্ছে ওয়ান সাইডেড বিরোধিতা।’

বিএনপি অভিযোগ করছে, সরকার ডামি নির্বাচন করছে। ডামি প্রার্থী দিয়েছে। এখন ডামি ভোটার উপস্থিতি দেখিয়ে নির্বাচন বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নিজেই একটা ডামি দল। বাংলাদেশে ডামি দল হচ্ছে বিএনপি।

বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচন প্রতিহত করবে না। একই সময় তারা আবার হরতাল দিচ্ছে। এটা স্ববিরোধিতা কি না। খবরে দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রেসক্রিপশনে বিএনপি তাদের কর্মসূচি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কিছু বলবেন কি না। একজন সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বায়াসড (পক্ষপাতমূলক) প্রশ্ন করছেন কেন? এটা বেশি বায়াসড।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মানুষের ধারণা আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ধারণা কী, তারা কয়টি আসন পাচ্ছে? মানুষের আরেকটি ধারণা, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বেশি জয়ী হবে। বিরোধী দল কে হবে, সে বিষয়ে আপনাদের মূল্যায়ন কী?

এমন দুটি প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা ইনশা আল্লাহ নির্বাচনে বিজয়ী হব। কত আসন, সেটা আমি এখনই বলতে চাই না। আর নির্বাচনের ফলই বলে দেবে বিরোধী দল কে হবে।’

আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট আশা করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা কথাই বলব, ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে।’
ভোটের দিন বিএনপির ডাকা হরতালসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হরতাল এমনিতেই আন্দোলনের মরচে ধরা হাতিয়ার। এই মরচে ধরা হাতিয়ার বিএনপি আগেও প্রয়োগ করেছে। কোনো লাভ হয়নি। সামনে লাভ হবে, এমন আশা করেও লাভ নেই।’

বিএনপি হরতাল ডেকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। ফলে বিএনপির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আহ্বান করবেন কি না। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোন কোন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে, তা তারা স্পষ্টভাবে বলেছে। নির্বাচনে এখন প্রকাশ্যে বাধা দিচ্ছে বিএনপি ও তার সমমনারা। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে কেন নিষেধাজ্ঞা আসবে না, কেন ভিসা নীতি প্রয়োগ হবে না—এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই জানতে চাই।’

বিএনপির হরতালে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কমবে কি না। যদি তা-ই হয়, তাহলে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা থাকবে? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নাই। সব সময় নির্বাচনগুলোতে দেখা যায়, ভোটারদের সাথে যোগাযোগ করা, কেন্দ্রে আনার জন্য নেতা-কর্মীদের টিম আছে। তারা সেই কাজ করবে। বেশির ভাগ ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবে। যারা একটু হয়তো দেরি করছে, তাদের একটু তাড়াতাড়ি আসার জন্য হয়তো অনুরোধ করতে পারে। সেটা আমাদের টিমগুলো করবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.